বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মু্র্শিদাবাদের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-কে অপসারণের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এক শিক্ষকের দ্বিতীয় পক্ষের বিয়ে বৈধ নয়। তার পরেও কেন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে মৃত শিক্ষকের পেনশন দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলে ডিআই সুজিতকুমার হাইতকে অপসারণের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন রবীন্দ্রনাথ হালদার। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। শিক্ষকের প্রথম পক্ষের স্ত্রী কুসুম হালদার। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রয়েছেন। মামলাকারী কুসুমের অভিযোগ, ওই শিক্ষকের দ্বিতীয় পক্ষের বিয়ে বৈধ নয়। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ডিআই। আদালতেরও পর্যবেক্ষণ, রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় পক্ষের বিয়ে বৈধ নয়। অথচ পেনশনের টাকা ডিআই প্রথম স্ত্রীর পরিবর্তে দ্বিতীয় স্ত্রীকে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর পরেই ডিআইয়ের উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ ছিল। তার পরেও এই ভুল কী ভাবে হয়? যেখানে আদালত বলছে দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ নয়, সেখানে কী ভাবে দ্বিতীয় স্ত্রীকে পেনশন দেন?’’ মঙ্গলবারের শুনানিতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন ডিআই। তাঁকে বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘ডিআই পদ কি জমিদারি ভেবেছেন।’’
স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে বিচারপতির নির্দেশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিআই পদে অন্য কাউকে নিয়োগ করতে হবে। সুজিতের চাকরি বহাল থাকলেও তাঁকে এই পদে আর রাখা যাবে না। পাশাপাশি বিচারপতি এ-ও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার আদালতে ডিআই যে ভঙ্গিতে কথা বলেছেন, তাতে তিনি অসন্তুষ্ট। আদালত এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, ‘‘ডিআই চালাকি করছেন। ওভারস্মার্ট (অতি চালাক)। তিনি এই ধরনের ভুল করেন কী ভাবে?’’ বিচারপতি মনে করেন, তাঁর অপসারণে বাকি ডিআইদের কাছে বার্তা যাবে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মুর্শিদাবাদের স্কুল পরিদর্শককেও অপসারণ করেছেন। মুর্শিদাবাদের বালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বনানী ঘোষ অভিযোগ করেন, তাঁর সন্তান বিরল রোগে আক্রান্ত। স্বামীও পঙ্গু। এই অবস্থায় সংসার সামলে দূরের কর্মক্ষেত্রে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। কর্তৃপক্ষের কাছে তাই বাড়ির কাছাকাছি কোনও স্কুলে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, বার বার আবেদন সত্ত্বেও কর্ণপাত করেননি কর্তৃপক্ষ। জেলায় নিযুক্ত স্কুল পরিদর্শক কিছুতেই বদলিতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে শুধু অমানবিকতার অভিযোগই নয়, আদালতে ভুল তথ্য পরিবেশন করার অভিযোগও রয়েছে। বিচারপতি তাঁকে এ বিষয়ে স্কুলের তথ্য জমা দিতে বলেছিলেন হলফনামা আকারে। সেই হলফনামায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তথ্য দিয়েছেন অভিযুক্ত। এর পরেই বিচারপতি জানান, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে স্কুল পরিদর্শককে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি, মামলাকারী শিক্ষিকাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে বাড়ির নিকটবর্তী স্কুলে বদলি করার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy