Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Rana Ayyub

মুসলিম পরিচয়েই রুখে দাঁড়াতে চান রানা

টুইটারে এক শ্রেণির কাছে ‘অন্যতম ঘৃণ্য সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত রানা বলেন, “আমাকে যাঁরা নিশানা করছেন, তাঁরা তো ভোলেন না যে, আমি একটি মেয়ে এবং মুসলিম, তা হলে আমি তা মনে রাখলে দোষ কী!”

গিরিশ মঞ্চে ভিডিয়ো-বক্তৃতায় রানা আয়ুব। রবিবার।

গিরিশ মঞ্চে ভিডিয়ো-বক্তৃতায় রানা আয়ুব। রবিবার।

  নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:১১
Share: Save:

সাংবাদিকের দৌড় কত দূর? কেন তাঁকে অ্যাক্টিভিস্ট বা গণ আন্দোলনের শরিক হতে হবে? অথবা এক জন নিরপেক্ষ সাংবাদিকের ক্ষেত্রে কেন ছায়া ফেলবে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতি বা ধর্মপরিচয়? আজকের ভারতের পটভূমিতে এই প্রশ্নগুলিই কাটাছেঁড়া করছিলেন দেশের প্রথম সারির সাংবাদিকদের এক জন, রানা আয়ুব।

টুইটারে এক শ্রেণির কাছে ‘অন্যতম ঘৃণ্য সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত রানা রবিবার স্পষ্ট বলেন, “আমাকে যাঁরা নিশানা করছেন, তাঁরা তো ভোলেন না যে, আমি একটি মেয়ে এবং মুসলিম, তা হলে আমি তা মনে রাখলে দোষ কী!” একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতির সাহায্য নিয়ে দেশে-বিদেশে পরিচিত এই সাংবাদিক বলেন, “আমি মুসলিম হিসেবে আক্রান্ত, মুসলিম হয়েই প্রতিরোধ করব। এটাই স্বাভাবিক।”

‘গুজরাত ফাইলস: অ্যানাটমি অব আ কভার আপ’ বইয়ের লেখিকার একটি অনুষ্ঠানে শহরে আসার কথা ছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য আসতে পারেননি। ‘নিপীড়িতের জগঝম্প’ বলে একটি মঞ্চের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসরে ৩০ মিনিটের ভিডিয়ো বার্তা পাঠিয়েছেন রানা। মুম্বইয়ে তাঁর ছোটবেলার দেশ, বাবরি ধ্বংসের আবহে ক্রমশ সব পাল্টে যাওয়া থেকে শুরু করে আজকের ভারত, নবি মুম্বইয়ে সাম্প্রতিকতম ভিন্‌ ধর্মে বিয়েবিরোধী এবং মুসলিমবিদ্বেষী একটি মিছিল নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। রানা বলেন, “ফ্যাসিবাদের সব কিছু আমি হয়তো বুঝি না। কিন্তু দেশে এই ঘৃণা, মানুষকে পৃথকীকরণ এবং তকমা দেওয়া, সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ— এগুলি অবশ্যই ফ্যাসিবাদ।”

৩৮ বছরের রানা টুইটারে আক্রান্ত তো হয়েইছেন, তাঁর ভুয়ো নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রানার জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন (রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার) আশঙ্কা প্রকাশ করে ভারত সরকারকে বার্তা পাঠিয়েছে। রানা বলেন, “সারা দুনিয়ায় ঘুরে নিজের দেশে যখন শুনি আমি মুসলিম বলে এ মাটি আমার নয়, তখন ছোটবেলার বিভীষিকাময় স্মৃতি ৯২-৯৩ সালের মুম্বই, স্বচক্ষে দেখা ২০০২-এর গুজরাতের ত্রাণ শিবিরের স্মৃতি আমাকে ধাক্কা দেয়। জানুয়ারিতে আমেরিকা থেকে ফেরার পরেও দেখি, ২০০৯-এ গোয়া বিস্ফোরণে সনাতন সংস্থা বলে একটি মঞ্চের ভূমিকা নিয়ে আমার ‘স্টোরির’ জন্য কী-সব মামলার ডাক পড়েছে। তাতে আমি মুসলিম বলে নানা অভিযোগ। এ সবের পরে স্টোরি লিখতে বসে আতঙ্কে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। মনে হয় এটা লিখলে আবার কী হেনস্থা শুরু হবে। ক্লান্ত লাগে। ভাবি, ঢের ভাল হতো যদি আমিও বিশ্রামের জীবন পেতাম! পরক্ষণেই ইতিহাসের দায়টাও মনে পড়ে।” রানা মনে করেন, সমাজমাধ্যমে এখন তাঁর নিজস্ব প্রভাব তৈরি হয়েছে বলেও অন্যের প্রতি অন্যায় হলে বা দলিত সাংবাদিক আক্রান্ত হলে, তাঁদের পাশে থাকাটাও কর্তব্য। নারীর ব্যক্তিগত চাহিদাকে মর্যাদা দেন। তাই একই সঙ্গে ইরানের হিজাব-বিরোধী মেয়েরা এবং ভারতে হিজাব পরতে চাওয়া মেয়েদের সমর্থনের কথা বলেছেন রানা। সেই সঙ্গে তাঁর উপলব্ধি, “আমার মতো সম্পন্ন মুসলিম পরিবারের মেয়ের সঙ্গে যদি এমনটা ঘটে, তবে আরও বঞ্চিতদের সঙ্গে কী ঘটছে ভাবলে শিউরে উঠছি।” রানার বলার পরে এ দিন ‘চেতনা’র ‘মেফিস্টো’ নাটকটি দেখানো হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Rana Ayyub Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy