কাহিনির ‘নায়ক’বিশ্বজিৎ পোদ্দার।
কোন্নগর থেকে বালি, সব মিলিয়ে মোট চারটি স্টেশন। হাওড়া শাখার ওই স্টেশনগুলিতে নামলেই চোখে পড়বে একটা পোস্টার— ‘কোন্নগরের কনে’।
আসলে সেটা স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটা ছবির বিজ্ঞাপন। কিন্তু, সেই শর্ট ফিল্ম এবং তার পোস্টারের আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক অজানা কাহিনি।যা কল্পনা নয়, বরং ঘোরতর বাস্তব।
কী সেই কাহিনি? তা জানতে কাহিনির ‘নায়ক’বিশ্বজিৎ পোদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তিনি কোন্নগর স্টেশনে নিজের ‘ছবি’র পোস্টার মারছিলেন। সেই অবস্থাতেই জানালেন গোটা কাহিনিটা।
গত জুলাইয়ের ২৩ তারিখ। দিনটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে বিশ্বজিতের। তারাপীঠ থেকে ফিরছিলেন তিনি। বর্ধমান লোকালে উঠেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগের মূহুর্তে বিশ্বজিতের উল্টো দিকের আসনে এসে বসে একটি পরিবার। বাবা-মা, সঙ্গে তরুণী এক মেয়ে।
আরও পড়ুন: রঙে-চিহ্নে আলাদা হবে শহর ও শহরতলির অটো
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই ফের অনুদান, কার্নিভালে বাড়তে পারে ক্লাবের সংখ্যা
হঠাৎ করেই মেয়েটির সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায় বিশ্বজিতের। তার পর থেকেই আর চোখ ফেরাতে পারেননি তিনি। বুধবার ফোনে রাজ্য সরকারি কর্মী বিশ্বজিৎ বলেন, “মেয়েটি যে অসাধারণ সুন্দরী, তা নয়। অথচ নিজের অজান্তেই বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল তাঁর দিকে।” তারাপীঠ থেকে বর্ধমান— গোটা যাত্রাপথ এ ভাবেই চলেছিল। বিশ্বজিতের এক বার মনে হয়, মেয়েটি হয়তো অস্বস্তি বোধ করছেন। তিনি জোর করেই চোখ ঘুরিয়ে নেন।
ট্রেন বর্ধমান পৌঁছয়। জোকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ওই ট্রেন পাল্টে হাওড়াগামী ট্রেনে ওঠেন। এখানেই শেষ হতে পারত গোটা গল্পটা। কিন্তু, হল না।কারণ, ফের সেই ট্রেনেই একই কামরায় আবার উল্টো দিকের আসনে এসে বসেন ওই একই পরিবার। আর সেটাই বাঁক বদলে দেয় গল্পের। বিশ্বজিৎ বলেন, “এ বার অনেক সপ্রতিভ লাগছিল মেয়েটিকে। মুখে হালকা হাসিও ছিল।’’
মনে একটু জোর পেয়ে বিশ্বজিৎ এ বার আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। ফোন নম্বরও চেয়েছিলেন তিনি। কোন্নগরে নামবার সময় বাবা-মায়ের নজর এড়িয়ে অস্ফুটে নম্বরটাও বলেছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু সেটা শুনতে পাননি বিশ্বজিৎ। তার পর থেকেই সেই তরুণীকে ভুলতে পারছেন না বছর উনত্রিশের বিশ্বজিৎ।
শর্টফিল্ম ‘কোন্নগরের কনে’-এর সেই পোস্টার।
রাত-দিন— সব সময়েই সেই নাম না-জানা তরুণীই তাঁর ‘ধ্যান-জ্ঞান’ হয়ে ওঠে। তার পরেই সেই ‘কন্যা’কে খোঁজার শুরু। বিশ্বজিৎ বলেন, “সে দিন ট্রেনে আসতে আসতে কথা শুনে মনে হল ওঁদের বাড়ি কোন্নগরে। কয়েক বার বালির কথাও শুনেছি।” সেই সূত্র ধরেই কোন্নগর থেকে বালি— সেই কন্যার খোঁজ চালাচ্ছেন তিনি। তার পর হঠাৎই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায় তাঁর। সে দিন যে পোশাক পরে ওই তরুণীকে দেখেছিলেন তিনি, সেই একই লাল-কালো-সবুজ ডোরা কাটা টি-শার্ট আর সঙ্গে থাকা কালো পিঠ ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ছবি তোলেন। তখনই বন্ধুরা বিশ্বজিতের পরিকল্পনা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। বিশ্বজিৎ বলেন, “আমি নিজেও শখে ছোটখাটো ছবি বানাই। বন্ধুরা আমাকে গোটা গল্পটা নিয়ে একটা ছবি বানানোর পরামর্শ দেয়। আমি বন্ধুদের সাহায্যে সেই গল্প ধরে একটা ছবি বানিয়ে ১৪ অগস্ট ইউটিউবে আপলোডও করি।”
তার পর, সেই ছবির পোস্টার ছাপিয়ে কোন্নগর থেকে বালি— ‘কোন্নগরের কনে’ সমস্ত স্টেশনে লাগানো হয়। উদ্দেশ্য একটাই। যদি কোনও ভাবে ওই তরুণী সেই পোস্টার দেখে বিশ্বজিৎকে চিনতে পেরে যোগাযোগ করেন। পোস্টারের তলায় বিশ্বজিৎ নিজের ফোন নম্বরও দিয়ে রেখেছেন।
কোন্নগর স্টেশনে পোস্টার সাঁটানোর ফাঁকে বিশ্বজিৎ।
দু’সপ্তাহের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও বিশ্বজিতের ফোনে সেই তরুণীর ফোন আসেনি। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি। কারণ এখনও তাঁর চোখের সামনে ভাসে সেই কালো টপ আর ঘিয়ে রঙের জিন্সের প্যান্ট পরা তরুণীর মুখ। বিশ্বজিতের পোস্টারের একটা লাইন লেখা আছে— ‘চিনতে পেরেছো তো, সে দিন দেখা হয়েছিল ট্রেনে, আই উইল বি ওয়েটিং ফর ইউ...’।
কয়েক দিন আগে মুম্বইতে প্রেমিকার ‘মান’ ভাঙাতে এক যুবক ছোট ছোট হোর্ডিং ভরিয়ে দিয়েছিলেন শহর। সেখানে লেখা ছিল, ‘শিবদে আই অ্যাম সরি’। সঙ্গে ‘লভ’ চিহ্ন। পরে ওই যুবককে জরিমানা করে পুলিশ। কারণ, বেআইনি ভাবে ওই হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। তবে, জানা যায়নি আদৌ ওই হোর্ডিং দেখে ‘শিবদে’র মানভঞ্জন হয়েছিল কি না!
ঠিক তেমন ভাবেই জানা যায়নি, ‘কোন্নগরের কনে’ আদৌ দেখেছেন কি না এই পোস্টার? যদি দেখে থাকেন, তবে কি চিনতে পারলেন বিশ্বজিৎকে? যদি চিনতেও পারেন, যোগাযোগ করবেন তো? বিশ্বজিতের মতো এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই।
—নিজস্ব চিত্র।
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy