Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kuntal Ghosh

কারও দাবি কুন্তলকে চাকরির জন্য দিয়েছেন ৩ লক্ষ, কেউ বলছেন ৫! সেই টাকার কী হবে, প্রশ্ন

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের দাবি, কুন্তল চাকরিপ্রার্থীদের থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন।

তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষ।

তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বলাগড় শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২১
Share: Save:

কারও দাবি, চাকরির জন্য তিনি তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কারও দাবি, পাঁচ লক্ষ। কেউ টাকার অঙ্ক মুখে না বললেও বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সেটা নেহাত কম নয়। কেউ কেউ বলছেন, চাকরি না-মেলায় অল্প কিছু টাকা ফেরত পেয়েছেন।

হুগলির বলাগড়ের যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ায় এ বার সেই টাকার কী হবে, সেই উদ্বেগ ছড়াচ্ছে গোটা ব্লক জুড়ে। টাকা দিয়েও চাকরি না-মেলায় এতদিন তাঁদের কেউ পুলিশ বা কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে কোনও অভিযোগ জানাননি। কুন্তল গ্রেফতার হওয়ায় টাকা নিয়ে উদ্বেগে এ বার তাঁরা মুখ খুলছেন। তবে নিজেদের নাম প্রকাশে এখনও তাঁদের আপত্তি রয়েছে।

বলাগড় ব্লকের এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে ছেলের চাকরির জন্য ওঁকে (কুন্তল) কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। চাকরি হয়নি। কিছুটা টাকা ফেরত পেয়েছি। এখন কী হবে, চিন্তার।’’ এক চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন, ‘‘উনি তো ধরা পড়লেন। টাকা কে ফেরাবে? চাকরি তো পাইনি।’’ আর একজনের দাবি, ‘‘চাকরির জন্য ওঁকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছি। লাভ হল না।’’

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের দাবি, কুন্তল চাকরিপ্রার্থীদের থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন। গ্রেফতারের পরে কুন্তলের দাবি, ‘‘ আমি নির্দোষ। কারও থেকে টাকা নিইনি। তাপস মণ্ডল আমাকে ফাঁসিয়েছে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, বাংলায় স্নাতক কুন্তল লাজুক ধরনের মানুষ। ধনেখালির ভান্ডারহাটিতে বিএড কলেজ তৈরির পরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এখন যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। কুন্তলের বাবা, প্রয়াত স্বপন ঘোষ শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান ছিলেন।

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, অধুনা হাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে শাসক দলের শীর্ষস্তরে ওঠাবসা ছিল কুন্তলের। নীলবাতির গাড়িতে তাঁকে দেখা যেত। বাড়িতে সিভিক ভলান্টিয়ারের পাহারাও দেখা গিয়েছে অনেক সময়। হুগলিতে দলের অন্তত ছয় বিধায়কের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা শোনা যায়।

জানা গিয়েছে, স্ত্রী-মেয়ে ও মাকে নিয়ে কুন্তল বছর সাতেক ধরে নিউ টাউনে থাকেন। বলাগড়ে আসেন কম। তবে, এলাকায় তাঁর ‘সমাজসেবী’ ভাবমূর্তি। দরাজ হাত। পুজো-অনুষ্ঠানে অতিথি আনার ক্ষেত্রেও নানা সংগঠন তাঁর দ্বারস্থ হয়। তিনি যখন বলাগড়ের বাড়িতে আসতেন, চাকরিপ্রার্থীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন।

বলাগড়ের ধাওয়াপাড়ায় কুন্তলদের দোতলা বাড়ি। মূল ভবন তালা দেওয়া থাকে। বাইরে খাঁচায় দশাশই তিনটি ল্যাব্রাডর আছে। কুকুর দেখাশোনার লোকও আছে। বাড়িতেই রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শিবমন্দির।

প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন, ‘‘কুন্তলকে ভাল ছেলে বলেই জানতাম। সমাজসেবা করত। ওঁর গ্রেফতারের খবরে খুব অবাক হয়েছি।’’ অনেকেরই বক্তব্য একই।

শনিবার বলাগড়েরই বারুইপাড়ায় জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রায় সাড়ে ১২ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি নিয়ে গিয়েছে ইডি। শান্তনু-কুন্তলের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এলাকায় তো বটেই, তৃণমূলেও চর্চা চলে। শান্তনুর দাবি, তিনি কোনও দুর্নীতিতে যুক্ত নন। তবে, কুন্তলের সঙ্গে পরিচয়ের কথা অস্বীকার করেননি। আগামী সপ্তাহে ইডি শান্তনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও দুর্নীতিতে যুক্ত নই। সেটা প্রমাণিত হলে যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত।’’

এক সময় জিরাটে শান্তনুর মোবাইল ফোনের দোকান ছিল। গাড়ি ভাড়া দিতেন। বাবার মৃত্যুর পরে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে চাকরি পান। ছাত্র রাজনীতি থেকে তৃণমূলে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত এই নেতা পরে যুব তৃণমূলের সভাপতি হন। দলে রীতিমতো প্রভাব ছিল।

২০১৮ সালে তারকেশ্বর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে জেলা পরিষদের সদস্য হয়েই কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর খুড়তুতো ভাইয়ের স্ত্রী সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের প্রধান। তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন। তবে, এখন ব্লক তৃণমূলে শান্তনু কিছুটা ‘একঘরে’। তাঁর জীবনযাত্রা নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন রয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি-সংস্রব নিয়েও দলে গুঞ্জন ছিল। শান্তনু কোনও অভিযোগই মানেননি। তিনি বলেন , “আমি এ সবের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নই।”

কুন্তলের গ্রেফতার হওয়া, শান্তনুর বাড়িতে ইডি হানার কারণে পঞ্চায়েত ভোটের আগে হুগলিতে দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ মানছেন। এ নিয়ে তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশদে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘তদন্ত তদন্তের মতো চলছে। দলের নজর সব দিকেই রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kuntal Ghosh Recruitment Scam TMC candidates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy