Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রীর সফর

পলকে ঝকঝকে ঝাড়গ্রাম

তবে এ বার একেবারে অন্য ছবি এখানে। কারণ, নতুন জেলা হওয়ার পরে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সফর ঝাড়গ্রামে।

জোরকদমে: রাস্তায় পড়ছে পিচের প্রলেপ। নিজস্ব চিত্র

জোরকদমে: রাস্তায় পড়ছে পিচের প্রলেপ। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৩
Share: Save:

রাজ্যে পালা বদলের পর থেকে একের পর এক জেলায় সফর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে অভিজ্ঞতায় আনকোরা নয় ঝাড়গ্রামও।

তবে এ বার একেবারে অন্য ছবি এখানে। কারণ, নতুন জেলা হওয়ার পরে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সফর ঝাড়গ্রামে। তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তৈরি হচ্ছে জেলার রাস্তা ঘাট। সাফ করা হচ্ছে আগাছা-আবর্জনা। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বর হোক কিংরা রাস্তার কালভার্টের গার্ড ওয়াল— সর্বত্র নীল সাদার প্রলেপ। পুরসভা ও প্রশাসনের এমন তৎপরতায় বিস্মিত শহরবাসী, কিছুটা ক্ষুব্ধও। বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, সারা বছর এমন পরিষেবা মেলে না! কেবল মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ই তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন।

শহরের বেশ কিছু বেহাল রাস্তা সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। সে সব কাজ এতদিন হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ধাক্কায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেরামতি হয়ে গিয়েছে সেই রাস্তা। তাতে ফাঁক ফোঁকরও বিস্তর। অভিযোগ, কিছু নতুন রাস্তাও তৈরি হয়ে গিয়েছে বিনা টেন্ডারে, কোনও ওয়ার্কঅর্ডার ছাড়াই।

জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, ওই সব কাজের সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। এখন ঠিকাদারদের বরাত দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। বাস্তবে অবশ্য দেখা যাচ্ছে অন্য ছবি। শহরের একটি রাস্তা সংস্কারের কাজের বরাতপ্রাপ্ত এক ঠিকাদার সংস্থার কর্মী জানালেন, পুরসভা ও পূর্ত দফতরের অনুরোধে নিজের টাকায় ঠিকাদাররা কাজ করছেন। পরে কাজের পরিমাপ করে প্রশাসন বিল মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে।

তেমনই এক ঠিকাদার বলেন, “আদৌ এই কাজের টাকা পাবো কিনা জানি না! মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য প্রশাসনের চাপে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। কাজ না করলে আগের বকেয়া পাওনা পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা কাজ করছি।”

ঝাড়গ্রামে থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যে সব এলাকা দিয়ে যাবে, গত কয়েকদিনে তড়িঘড়ি সেই সব রাস্তার চেহারা বদলে গিয়েছে। মাত্র কয়েকদিনেই স্টেডিয়াম যাওয়ার ৮০০ মিটার রাস্তা নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। এসডিপিও অফিস থেকে ঝাড়গ্রাম বিডিও অফিস যাওয়ার ৩০০ মিটার বেহাল রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শহরের অদূরে পুকুরিয়া এলাকার রাজপাড়া ফুটবল মাঠে হেলিপ্যাড করা হয়েছে। দুবরাজপুর মোড় থেকে পুকুরিয়া যাওয়ার বেহাল রাস্তাও মসৃণ করার কাজ চলছে— যাতে গাড়িতে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী ঝাঁকুনি না অনুভব করেন।

শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন। বৈঠক শেষে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কেউ কেউ মেদিনীপুর হয়ে ফিরতে পারেন। তাই অরণ্যশহরের বাছুরডোবা এলাকা থেকে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া যাওয়ার ১৩ কিমি রাস্তা মেরামতির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পরিদর্শনের কোনও সম্ভাবনা নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তবু ঝুঁকি নিতে রাজি নয় স্বাস্থ্য দফতর। গোটা হাসপাতাল চত্বর সাফ সুতরো করে সৌন্দর্যায়নের কাজ হচ্ছে। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। তবে তড়িঘড়ি তৈরি হওয়া ও মেরামত হওয়া রাস্তা কতদিন ভাল থাকবে সেই প্রশ্ন উঠেছে।

১০ তারিখ ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুলিশ সুপারের কার্যালয়। বহু যত্নে তৈরি স্টেডিয়ামের মাটি খুঁড়ে বাঁশ আর শালবল্লি পুঁতে তৈরি হচ্ছে বিজয়া সম্মিলনীর সভাস্থল। ১১ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য জনসভার জন্য রাজ কলেজ সংলগ্ন মাঠে তৈরি হচ্ছে চোখধাঁধানো সভাস্থল। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পাঁচটি তোরণ, প্রায় পাঁচ হাজার হোর্ডিং-ব্যানারে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে অরণ্যশহর। অরণ্যশহরের বাসিন্দা সাগরিকা দে, শ্রাবণী সরকার বলছেন, “মাসে একবার মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে এলে অন্তত নাগরিক পরিষেবাগুলো মিলবে।”

শনিবার ঝাড়গ্রাম ডিএম অফিস চত্বরের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন দিনমজুর সরস্বতী দিগার। এক গাল হেসে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এলে বাড়তি মজুরিতে সারা দিন ধরে
কাজ মেলে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE