Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Jawhar Sircar

আরজি কর থেকে দুর্নীতি! মমতাকে চিঠি লিখে তৃণমূল সাংসদের পদ ও রাজনীতি ছাড়লেন জহর সরকার

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার। সূত্রের খবর, এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।

Jawhar Sircar

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জহর সরকার। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৫৫
Share: Save:

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সুর চড়িয়ে এর আগে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। কিন্তু এই প্রথম শাসকদলের কোনও সাংসদ ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধু তা-ই নয়, রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জহর।

মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে লেখা চিঠিতে জহর বলেছেন, ‘‘আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এককথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’

শুরুতে এই আন্দোলনকে বাম-বিজেপির আন্দোলন বলে দাবি করেছিলেন মমতা। সেই পথে হেঁটে তৃণমূলের অন্য নেতারাও সেই দাবি করতে শুরু করেছিলেন প্রকাশ্যে। এই প্রবণতার নিন্দা করেছেন জহর। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না। এঁরা কেউ রাজনীতি পছন্দ করেন না। শুধু একবাক্যে বিচার ও শাস্তির দাবি তুলেছেন।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা জহর সরকারের চিঠি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা জহর সরকারের চিঠি।

বছর দুয়েক আগে রাজ্যে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে যখন বিদ্ধ হচ্ছিল শাসকদল, সে সময়েও মুখ খুলেছিলেন জহর। এ বারও দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ চিঠিতে টেনে এনেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘‘মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবাই দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির আস্ফালন। আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।’’

চিঠিতে জহর জানিয়েছেন, সংসদে নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের ‘স্বৈরাচারী ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির’ বিরুদ্ধে লড়তেই সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (পার্থ চট্টোপাধ্যায়)-র বিরুদ্ধে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল, তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু তখন দলের অনেক নেতা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন বলেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জহর। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম। কিন্তু আমার রাজ্যে দুর্নীতি আর দলের একাংশের নেতাদের অন্যায় দাপট দেখে আমি হতাশাগ্রস্ত হলাম।’’

প্রসঙ্গত, শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় পার্থ এবং তার কিছু দিন পরেই গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরেই দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন জহর। দলের এক দিক পচে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বাড়ির লোকেরা ও বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়তে বলেছেন বলেও দাবি করেছিলেন। সেই সময় জহরের বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়িয়েছিলেন তৃণমূলের আর এক প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘জহর সরকার কোনও দিন তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেননি। ওঁকে সবচেয়ে লোভনীয় পদ রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল দল। তিনি কিনা দলের ভিতরে না বলে প্রকাশ্যে দলবিরোধী কথা বলে দিলেন! এটা খুবই লজ্জার কথা। ওঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jawhar Sircar trinamool MP Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE