Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Newtown

জিমে যাওয়াই কাল হয়েছিল জয়পালের!

বাবার খেদ, জিম-যাত্রাই বুঝি তাঁর ছেলের অন্ধকার জগতে অনুপ্রবেশের দরজা খুলে দিল!

জয়পাল সিংহ ভুল্লার।

জয়পাল সিংহ ভুল্লার। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ০৬:৪২
Share: Save:

সবুজ মাঠে তার উড়ন্ত হ্যামার উল্কার মতো আছড়ে পড়ত অনেক দূরে। বড়সড় চেহারা ছিল বটে তবে ফিরোজপুরের দশমেস নগরের মাঠে তার প্রশিক্ষকেরা মনে করতেন, মেদের বাহুল্য বড্ড বেশি। একটু ঝরাতে হবে, তাই জিমে যাওয়া দরকার। বাবার খেদ, জিম-যাত্রাই বুঝি তাঁর ছেলের অন্ধকার জগতে অনুপ্রবেশের দরজা খুলে দিল!

পুলিশ এনকাউন্টারে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া জয়পাল সিংহ ভুল্লারের দেহ নিয়ে পঞ্জাবের প্রান্তিক জনপদে ফিরে যাওয়ার আগে তার বাবা ভুপিন্দর সিংহ ঘনিষ্ঠদের কাছে এমনই আক্ষেপ করে গিয়েছেন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আর যাই হোক বাবা তো, মানুষটার আক্ষেপ দেখে সত্যিই খারাপ লাগছিল। আফশোস করছিলেন, ‘আগার জিম জানে সে ইনকার কর দেতি তো....।’’ আড়ালে রয়ে গেল অন্য এক সত্য। ছেলের প্রতি প্রকট আস্কারা। পুলিশ কর্তাদেরই একাংশের মতে, নিয়মিত জিম তো অনেকের সন্তানই যায়। সেই জিমের আরেকটা দরজা তো আর অন্ধকার জগতের পথ খুলে দেয় না!

হ্যামার থ্রোয়ার হিসেবে জাতীয় স্তরে তার নামটা উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করতেই প্রশিক্ষকদের পরামর্শ মেনে জিমে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন বাবা। তখনও সে মনজিৎ সিংহ। পঞ্জাব সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা স্পিড ফান্ড স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়ে এক মনে অনুশীলন করে চলেছে। ঘনিষ্ঠদের কাছে ভূপিন্দর জানিয়েছেন—‘তখন জয়পালের মাথায় শুধুই খেলার মাঠ, আশপাশের কিছুতেই ধ্যান নেই। কত দূরে হ্যামার ছুঁড়বে সেই নেশায় ডুবে রয়েছে।’ তিনি জানান, সেই ছেলেই জিমে গিয়ে জড়িয়ে পড়ল খান কয়েক বেপথু সমাজবিরোধীর সঙ্গে। পুলিশি চাকরির ব্যস্ততায় ছেলের পিছনে সময় দিতে না পারলেও ভূপিন্দর আঁচ করছিলেন, ‘বেটা বিগড়তে জাতা হ্যায় (ছেলে বিগড়ে যাচ্ছে)!’ এই সময়ে দীর্ঘ ছ’মাসের পুলিশ প্রশিক্ষণ শিবির থেকে ফিরেই ভূপিন্দর জানতে পেরেছিলেন, পুলিশের খাতায় নাম উঠে গিয়েছে জয়পালের। ছেলের দেহ নিতে শহরে এসে ভূপিন্দর জানিয়েছেন— ‘মোটা টাকার বন্ডে জামিন পাওয়ার পরে ওকে ডেকে এক দিন দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলাম। বাইরের ঘরে বসে ওকে বলেছিলাম, ডান দিকে ঘরের দরজা, বাঁ দিকে অপরাধ জগতের, কোনদিকে যাবে ভেবেচিন্তে বেছে নাও! চোখের জল ফেলে জয়পাল জানিয়েছিল, আর কখনও অন্ধকার জগতে পা দেবে না!’ কিন্তু কথা সে রাখতে পারেনি। পরের বছরেই লুধিয়ানার এক সিনেমা মালিকের ছেলেকে অপহরণ-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের কথায়, অপরাধের সুতোয় জড়ালে সে ফাঁস গলে বেরিয়ে আসা সহজ নয়! যেমন সহজ নয়, অপরাধের সূত্র মুছে ফেলা।

যে কালো গাড়ির সূত্র ধরে পুলিশ জয়পালের গতিবিধির আঁচ পেতে শুরু করেছিল, তা ওই সূত্র ‘মুছে ফেলতে না-পারারই’ ইঙ্গিত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। দুই পুলিশ কর্মীকে খুন করার পরে পালিয়ে বেড়ানো জয়পালের কাছে ‘কাপড়া’ (পুলিশের অনুমান অস্ত্র-টাকা) পৌঁছে দিতে গিয়েছিল ওই কালো গাড়িটি। গ্বলিয়রের কাছে ডাবরা এলাকায় সে গাড়ি প্রথম নজরে পড়ে পঞ্জাব পুলিশের। ততক্ষণে ধরা পড়ে গিয়েছে জয়পালের অন্য দুই সাগরেদ। তাদের জেরা করে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট লাগানো ওই গাড়ি জয়পাল ভুল্লারদের নিয়ে রওনা দিয়েছে। হাইওয়ে ধরে পর পর পাঁচটি চেক পোস্টের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সেই কালো গাড়ির গতিমুখও নজরে রাখে পুলিশ। কিন্তু ঝাড়খন্ডের পরে সে গাড়ি পুলিশি নজরদারি থেকে বেরিয়ে যায়। তবে, তাদের সম্ভাব্য গন্তব্য যে কলকাতা, তত দিনে সে ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় পুলিশ। তার সূত্র ধরেই রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে পঞ্জাব পুলিশের ‘অরগানাইজড ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট’-এর কর্তারা। যার পরিণতি ঘটে বুধবারের এনকাউন্টারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Newtown Shootout
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy