ছন্নছাড়া: পুড়ে গিয়েছে প্রায় সবটাই। থার থেকে ভাল চাল খুঁজে বার করার চেষ্টা। জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের দলুয়াখাকিতে। ছবি: সমীরণ দাস।
এক গোছা কাচের চুড়ি নিয়ে খেলছিল দুই ভাইবোন। বছর পাঁচেকের দিদি পরম যত্নে চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছিল দেড় বছরের ভাইয়ের হাতে। খিলখিলিয়ে হেসে উঠছিল দু’জনেই।
শিশু দিবসের সকালে দুই শিশুর এই অনাবিল হাসি দেখে বোঝার উপায় নেই, আগের রাতে মাথার উপর থেকে ছাদ উড়ে গিয়েছে ওদের। যেখানে বসে খেলছে দু’জন, তার চারদিকে তখনও পোড়া চিহ্ন। কয়েক ঘণ্টা পরে খিদে পেলে কী খাবে দুই শিশু, জানেন না পরিবারের লোকজনেরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুন হন সোমবার। তার পরেই ওই পঞ্চায়েতের দলুয়াখাকি লস্কর পাড়া এলাকায় তাণ্ডব চালায় শ’দুয়েক লোক। অভিযোগ, নেতা খুনের জেরে তৃণমূলের লোকজনই সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। গোটা পনেরো বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর, লুট চলে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ধানের গোলা, মোটর ভ্যান। ঘরে মজুত চাল, পোশাকেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার ফের এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কার্যত ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে গ্রামটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পোড়া জিনিসপত্র। কোথাও পোড়া চাল, কোথাও পুড়ে যাওয়া পোশাকের অংশ। মরে গিয়েছে পোষা পাখিও। পোড়া খড়ের গাদা থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। গ্রামের পুরুষেরা আগেই এলাকা ছেড়েছিলেন। সোমবার রাতে শিশু ও মহিলাদের অনেকে দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। কয়েক জন চলে যান আত্মীয়ের বাড়িতে। কিছু মহিলা বাড়ি আগলে পড়েছিলেন এলাকায়। মায়েদের সঙ্গে থেকে গিয়েছে তাঁদের সন্তানেরাও।
সে রকমই দুই শিশু ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে খেলছিল এ দিন। তাদের মা বলেন, ‘‘ঘরের ভিতর আলমারিতে ওদের খেলনা থাকত। সে সবও আলমারি থেকে বের করে ওরা ভাঙচুর করেছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। কাচের চুড়ি ক’টা অক্ষত ছিল। ওই নিয়েই খেলছে।’’ দুপুরে কী খাবে বাচ্চারা, তখনও জানেন না মা। ওই পাড়াতেই বাড়ি সিপিএম নেতা আনিসুর লস্করের। স্থানীয় সূত্রের খবর, তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে চাপানউতোর ছিল সইফুদ্দিনের। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাই আনিসুরের উপরে সব রাগ গিয়ে পড়ে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের। শুরু হয় ভাঙচুর, লুটপাট।
এ দিন আনিসুরের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা মিলল তাঁর মা আবেদা বেওয়ার। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ছেলে সকাল থেকে বাড়িতে ছিল। ওরা হামলা করতে এলে পালিয়ে যায়। অন্য ছেলে-বৌমা, নাতি— সকলে পালিয়েছে। আমি একা বাড়িতে। কাল থেকে খাওয়া-দাওয়া হয়নি।’’
এলাকায় পুলিশ পিকেট চোখে পড়ল। তবে তাতে বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না স্থানীয় মানুষজন। সোমবার ফেরার সময়ে হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে গিয়েছে, ফের চড়াও হবে। সেই আতঙ্ক কাজ করছে। পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঙালবুড়ির মোড়ে সইফুদ্দিনের বাড়ির কাছেও পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। এলাকার লোকজনকে বাড়ির আশেপাশে তেমন দেখা যায়নি। বাড়ির লোকজনও সে ভাবে বাইরে বেরোননি।
এ দিন দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যলয়ে গিয়ে দেখা মিলল এলাকার বহু মহিলার। দলীয় সূত্রের খবর, ২৬ জন মহিলাকে শিশু-সহ রাতেই আনা হয় সেখানে। মহিলারা জানান, বাড়িতে মজুত খাবার, বাসন, পোশাক— সব নষ্ট করে দিয়েছে হামলাকারীরা। দলের তরফ থেকে পোশাক, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়েছে সবহারাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy