অভিনন্দন যাত্রায়
তীব্র কটাক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার সঙ্গে হুঙ্কার— সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) কার্যকরী হবেই। কলকাতায় ‘অভিনন্দন যাত্রা’ শেষ করে যে ভাষণ দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় কার্য়করী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, তার মূল সুর বাঁধা রইল এর মধ্যেই। কংগ্রেস এবং সিপিএম-কেও এ দিন প্রবল আক্রমণ করেছেন নড্ডা। কিন্তু সুর তাঁর সবচেয়ে চড়া ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই।
বেলা ১২টায় রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল বিজেপির মিছিল। জমায়েত শুরু হয়েছিল ১১টার আগে থেকেই। মিছিল শেষ পর্যন্ত শুরু হয় ২টো নাগাদ। কিন্তু জে পি নাড্ডার নেতৃত্বে হওয়া এই অভিনন্দন যাত্রায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহের হয়ে যে রোড শো করতে এসেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, সেই রোড শো-র চেহারা কথা তৃণমূলকে মনে করিয়ে দিয়ে এত দিন আস্ফালন করতেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু এ দিনের মিছিল সেই কর্মসূচিকেও অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে।
রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে শ্যামবাজারের সভামঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছতে জে পি নাড্ডার এ দিন সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বিজেপির সর্বভারতীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননরা তো মিছিলে ছিলেনই। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী, রাজ্য বিজেপির আরও পাঁচ প্রথম সারির নেতা সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, রাহুল সিংহ, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা ছিলেন। সাংসদদের মধ্যে ছিলেন, স্বপন দাশগুপ্ত, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, জ্যোতির্ময় মাহাতো, অর্জুন সিংহ, খগেন মুর্মু, নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর, সৌমিত্র খাঁ। এ ছাড়া ভারতী ঘোষ, সব্যসাচী দত্ত, শুভ্রাংশু রায়, শঙ্কুদেব পন্ডা-সহ বিজেপির প্রায় সব উল্লেখযোগ্য নেতা-নেত্রীকেই এ দিনের মিছিলে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।
ভাষণ দিচ্ছেন জে পি নাড্ডা।—নিজস্ব চিত্র।
বিকেল ৪টে ৩৫ নাগাদ শ্যামবাজারের মঞ্চে ভাষণ শুরু করেন নড্ডা। প্রায় ৩৫ মিনিট ভাষণ দেন। রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের পরে এ দিন কলকাতার শ্যামবাজারে জে পি নাড্ডার ভাষণ ফের প্রমাণ করে দেয় যে, সিএএ বিরোধিতায় যত জন রাজনীতিক সক্রিয় ভাবে ময়দানে নেমেছেন, তাঁদের মধ্যে বিজেপির রোষানলে সবচেয়ে বেশি এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করে নাড্ডা এ দিন বলেন যে, ‘‘মমতা সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করেন এবং সব সময়ই তিনি নিজের সঙ্কীর্ণ রাজনীতিকে তিনি দেশহিতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।’’
বিজেপির কার্যকরী সভাপতি এ দিন মহাত্মা গাঁধী এবং জওহরলাল নেহরুকে উদ্ধৃত করেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে তাঁরা কবে কী বলেছিলেন এবং যাঁরা ওই দেশগুলিচতে অত্যাচারিত হচ্ছেন বা হবেন, তাঁদের প্রতি ভারত সরকারের কর্তব্য সম্পর্কেই বা গাঁধী-নেহরুর মত কী রকম ছিল— সে কথা নাড্ডা মনে করিয়ে দেন। তার পরেই প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে যখন সেই লক্ষ্যেই আইন পাশ হল, তখন এত বিরোধিতা কেন? সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীকে তীব্র কটাক্ষ করে নড্ডা এ দিন মন্তব্য করেন— ওঁরা ইতিহাস জানেন না, ওঁদের পূর্বসূরিরা কী বলে গিয়েছেন, তা-ও ওঁরা জানেন না।
আরও পড়ুন:রঘুবর দাসের ইস্তফা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন হেমন্ত সোরেন
একই ভাবে মনমোহন সিংহ এবং প্রকাশ কারাটকেও আক্রমণ করেন নাড্ডা। প্রতিবেশী দেশগুলিতে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে মনমোহন এবং কারাট আগে কী বলেছিলেন, এখন কী বলছেন— তা তুলে ধরেন নড্ডা। তার পরেই অভিযোগ করেন যে, সেই একই কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও করছেন।
অভিনন্দন যাত্রায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।—নিজস্ব চিত্র।
দেশের ভালর জন্য কেন্দ্র যখন যা করতে গিয়েছে, মমতা তখনই তাতে বাধা দিয়েছেন বলে নাড্ডা মন্তব্য করেন এ দিন। এনআইএ গঠন, ইউএপিএ আইন পাশ করানো, তিন তালাক রদ আইন পাশ করানো, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া বা সাম্প্রতিকতম সিএএ— সব কিছুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাধা দিয়ে এসেছেন বলে নড্ডা এ দিন মন্তব্য করেন। তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে ভাঙা বাংলায় বিজেপির কার্যকরী সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘মমতা শুধুই বলেন হবে না, হবে না। তা হলে কী হবে বাবা! ’’
সিএএ পাশ হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে দিন পাঁচেক ধরে বিক্ষোভের নামে যে হিংসা দেখা গিয়েছে, সে প্রসঙ্গ তুলেও এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন নাড্ডা। যাঁরা হিংসা ছড়াচ্ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে শুধু ‘আবেদন’ রাখছিলেন কেন? প্রশ্ন নাড্ডার।
আরও পড়ুন:পিকচার অভি বাকি হ্যায়, কলকাতায় দাঁড়িয়ে মমতাকে হুঁশিয়ারি নড্ডার
এ দিনের মিছিলের বহর দেখে নাড্ডা যে অত্যন্ত খুশি, তা বোঝা গিয়েছিল তাঁর ভাষণের শুরুতেই। তিনি বলেন, ‘‘আমি বাংলায় বহুবার এসেছি। কিন্তু আজ যে দৃশ্য দেখলাম, এটা প্রথম বার দেখছি। আজকের দৃশ্য বাংলায় পরিবর্তনের সঙ্কেত দিচ্ছে। মমতাদিদির কাছেও সে সঙ্কেত পৌঁছে গিয়েছে।’’ ভাষণের শেষ দিকেও সেই একই ইঙ্গিত শুনিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নড্ডা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘ভগবান আপনার স্বাস্থ্য ভাল রাখুন, কারণ আপনাকে এখনও ২০২১-২২ দেখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy