ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ের দলীয় বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিল আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট)। একই দাবিতে কলকাতার রাজপথ অচল করে দেওয়ার হুমকি দিলেন হুগলির ফুরফুরা শরিফের পিরজাদাদের একাংশও। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বলছে, প্রতিবাদ হতেই পারে। কিন্তু ধর্মগুরুরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেই ভাল।
শনিবার কলকাতার ধর্মতলায় আইএসএফের কর্মসূচি ঘিরে তুলকালাম হয়। সেই ঘটনাতেই নওশাদ-সহ ওই দলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক গ্রেফতার হন। বিধায়ককে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএসএফ। ফুরফুরায় বিধায়কের বাড়িতে সোমবার আইএসএফের রাজ্য কোর কমিটির বৈঠক হয়। দলের চেয়ারম্যান পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী অবশ্য ছিলেন না। বৈঠক শেষে দলের কার্যকরী সভাপতি শামসুর আলি মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘নওশাদ সিদ্দিকীকে বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ গ্রেফতার করেছে, যা সংবিধান-বিরোধী।’’
আইএসএফ নেতৃত্বের অভিযোগ, নওশাদকে যারা মারধর করেছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। প্রতিবাদ করায় নওশাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়ে শামসুর বলেন, ‘‘ঘটনা যারা ঘটাচ্ছেন, তাঁরাই গ্রেফতার করাচ্ছেন। কারণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাঁদের হাতে। স্বরাষ্ট্র সচিবের নির্দেশ ছাড়া পুলিশের কোনও কাজ করার ক্ষমতা নেই। স্বরাষ্ট্র সচিব আবার কোনও কাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া করেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুপ কেন? বলুন, তিনি নির্দেশ দেননি!’’
শামসুর জানান, সোমবার রাত ১২টার পর থেকে সমাজমাধ্যমে আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) পরিবর্তন করা হবে। সাধারণ মানুষকেও সেই আহ্ববান জানানো হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় আজ, মঙ্গলবার মিছিল করা হবে। শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ঝান্ডা ছাড়া মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে বুধবার। আগামী ২৮ তারিখ আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদলের ভাঙড়ে যাওয়ার কথা। পরের দিন থানায় থানায় দাবি জমা দেওয়ার কর্মসূচি। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাওয়া হবে।
নওশাদের গ্রেফতার নিয়ে এ দিন বিকেলে ফুরফুরায় পিরজাদাদের একাংশও বৈঠকে বসেন। ইব্রাহিম সিদ্দিকীর বাড়িতে ওই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পিরজাদা কাসেম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘কাল (মঙ্গলবার) আমাদের অভিভাবকেরা বৈঠক করবেন। কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কালই জানানো হবে। তবে নওশাদকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে ফুরফুরার ভক্ত থেকে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ তৈরি হোন, আমরা কলকাতার রাজপথ অচল করে দেব।’’ আইএসএফের রাজ্য সহ-সম্পাদক লক্ষ্মীকান্ত হাঁসদা বলেন, পিরজাদাদের একাংশ প্রতিবাদ করতেই পারেন। ওঁরা ডাকলে তাঁরাও শামিল হবেন।’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘সব ধর্মের গুরুদেরই আমরা সম্মান করি। কিন্তু রাস্তায় অবরোধ করে অজস্র মানুষকে অসুবিধায় ফেলার সময়ে ওই ধর্মগুরুদের কী বক্তব্য ছিল? বিনা নোটিসে অবরোধ, তার পরে সরতে বললে তুলকালাম হয়েছে। প্রতিবাদ কেউ করতেই পারেন। কিন্তু ধর্মগুরুরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেই ভাল।’’ স্পিকারকে না জানানো প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের নেতা স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলে চটজলদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রেফতার তো করতেই হবে। অনুমতি নেওয়া না নেওয়া পরিস্থিতির উপরে অনেকটা নির্ভর করে।’’
ধর্মতলায় আইএসএফের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের ঘটনায় রবিবার স্ট্র্যান্ড রোড থেকে শেখ মহম্মদ ইকবাল নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক তাঁকেও ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ইকবালের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি প্রতনিধিদলের আজ লালবাজারে বিধায়ক নওশাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy