আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি।
শুধু প্রার্থী দেওয়াই নয়। লোকসভা ভোটের আগে বুথ স্তরের সংগঠনে জোর দিতে চাইছে নওশাদ সিদ্দিকিদের দল আইএসএফ। জেলায় জেলায় আপাতত সেই কাজই চলছে। অক্টোবরে বৈঠকে বসবে আইএসএফ রাজ্য কমিটি। সেখানেই পরিসংখ্যান পেশ করবেন জেলার নেতারা। কিন্তু কতটা এগোনো গেল বুথ স্তরের সাংগঠনিক কাজ? ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক তথা দলের চেয়ারম্যান নওশাদের দাবি, দক্ষিণবঙ্গে তো বটেই, উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলাতেও সংগঠনের ‘অগ্রগতি’ চোখে পড়ার মতো।
আনন্দবাজার অনলাইনকে নওশাদ বলেন, ‘‘কোচবিহার এবং দুই দিনাজপুরে আমাদের সাংগঠনিক কাজ খুব ভাল হচ্ছে। বুথ কমিটি গড়ার কাজ চলছে। নতুন জেলা হিসাবে ওই তিনটি জেলায় অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।’’ প্রসঙ্গত, ওই তিন জেলার মধ্যে কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সংখ্যালঘু অংশের বাস। যেমন কোচবিহারের সিতাই, শীতলকুচি, দিনহাটা তেমনই উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, ডালখোলা, ইটাহারে সংখ্যালঘুদের ঘনত্ব রয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জায়গাগুলিতেও সংখ্যালঘুরা রয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। আইএসএফের মূল লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট। তথ্য বলছে, উত্তরবঙ্গের ওই তিন জেলার তিনটি লোকসভা আসনই ২০১৯ সালে জিতেছিল বিজেপি। রাজ্যে সার্বিক ভাবে যখন সংখ্যালঘু ভোট শাসক তৃণমূলের কার্যত ‘পুঁজি’ হয়ে গিয়েছে, সেখানে তাদের পক্ষে তুলনামূলক ‘দুর্বল’ জায়গাগুলিকে যদি আইএসএফ লক্ষ্য করে, তা হলে সেটি জোড়াফুল শিবিরের জন্য ‘উদ্বেগ’ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে শাসকদলেরই একাংশ মনে করছেন। তবে পাশাপাশিই তাঁরা বলছেন, উত্তরবঙ্গে ধুপগুড়ির ফলাফল লোকসভা ভোটের আগে তাঁদের চাঙ্গা করেছে।
শাসক তৃণমূল অবশ্য বরাবরই নওশাদের সঙ্গে বিজেপির ‘আঁতাঁত’-এর অভিযোগ করে এসেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আইএসএফ যা করছে, সবটাই বিজেপির টাকায়। ওরা সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে চায়।’’ তবে উদয়ন এ-ও বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুরা জানেন, বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী লড়াই লড়ছেন! সংখ্যালঘুদের জন্য দিদি যে কাজ করেছেন, সেটাও তাঁরা জানেন। তাই যতই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হোক, ওরা (আইএসএফ) সফল হবে না।’’ আবার রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এর থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে তৃণমূল সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে আতঙ্কিত। আর টাকা দিয়ে ভোট ভাঙানোর কোনও প্রয়োজন বিজেপির নেই। ওটা তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’
তৃণমূল এর আগে একটি ‘অডিয়ো ক্লিপ’ প্রকাশ করে দাবি করেছিল, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে কথা বলেছেন নওশাদ। পাল্টা নওশাদ বলেছিলেন, তৃণমূল তাঁকে কিনতে চেয়েছিল। পারেনি বলেই এই সব রটানো হচ্ছে। নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নওশাদদের ‘ভোটকাটুয়া’ বলে আক্রমণ শানান। মাসখানেক আগে নেতাজি ইনডোরে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের সম্মেলনে মমতা স্পষ্টই বলেন, ‘‘আমি চাই না ফুরফুরা শরিফ রাজনীতি করুক। যেমন চাই না, বেলুড় মঠ রাজনীতিতে প্রবেশ করুক।’’
নওশাদরা যে লোকসভা ভোটে অন্তত ১২ থেকে ১৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে নীল নকশা আঁকছেন, তা আগেই লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সেই নকশা বলছে, ফুরফুরা শরিফের একাধিক পিরজাদা লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে পারেন বিভিন্ন কেন্দ্রে। তার মধ্যে রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার। রয়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়া, হুগলির শ্রীরামপুর, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট এবং বারাসতের মতো আসন। যেখানে সংখ্যালঘু ভোট ফলাফলে ‘নির্ণায়ক’ হতে পারে। নওশাদ আগেই বলেছিলেন, দল চাইলে তিনি ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়বেন।
তবে শেষ পর্যন্ত নওশাদরা ক’টি আসনে লড়বেন তা এখনও চূড়ান্ত নয়। কারণ, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার দরজাও খোলা রাখতে চান ‘ভাইজান’রা। কিন্তু তার জন্য সাংগঠনিক কাজ গোছানো থামিয়ে রাখতে চাইছে না আইএসএফ। আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে বড় কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন নওশাদেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy