Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee on Shahjahan Sheikh

ব্যতিক্রম পার্থ! ব্লকের নেতা হলেও শাহজাহানের ‘পাশে’ মমতা? কী বলছে বিরোধী শিবির, কী ব্যাখ্যা তৃণমূলের

এর আগে মমতা প্রকাশ্যে যাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা সকলেই ‘ওজনদার’ নেতা। জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালু এখনও মন্ত্রী। অনুব্রত বীরভূমকে তৃণমূলের ‘গড়’ তৈরি করেছিলেন।

Is Mamata Banerjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s statement about Shahjahan Sheikh a message to stand by him

(বাঁ দিকে) শাহজাহান শেখ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৩
Share: Save:

এখনও পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই ‘ব্যতিক্রম’। জেলবন্দি পার্থের পাশে কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অর্থে দাঁড়াননি। তা বাদ দিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন দুর্নীতিতে বিপন্ন তৃণমূলের প্রায় সব বড় নেতার পাশেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী দাঁড়িয়েছেন। প্রকাশ্যেই পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির নেতা শেখ শাহজাহানের নাম করে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা যা বলেছেন, তাতে বিরোধীদের দাবি, মমতা শাহজাহানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী এক বারও শাহজাহান ‘দোষী’ না ‘নির্দোষ’ তা বলেননি। তিনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) রণকৌশল নিয়ে বলতে গিয়ে শাহজাহানের নাম করেছিলেন মাত্র।

তবে শাসক শিবিরের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অনেকের বক্তব্য, মমতা যেমন বলেননি ‘শাহজাহান খুব ভাল ছেলে’, তেমনই এ-ও বলেননি যে, শাহজাহান অন্যায় করেছেন। তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত। তাঁদের মতে, রাজনীতিতে কে কী বললেন, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কে কী বললেন না। বগটুই প্রসঙ্গ তুলে অনেকের বক্তব্য, ঘটনার তিন দিনের মধ্যে মমতা অকুস্থলে পৌঁছেছিলেন। তার পর সেখানে দাঁড়িয়েই পুলিশকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার দু’ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেন তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সন্দেশখালির ঘটনার পর শাহজাহান প্রায় দেড় মাস সম্পূর্ণ ‘বেপাত্তা’। অন্তরাল থেকে ভিডিয়োবার্তা দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে এখনও ধরতে পারেনি। গত দেড় মাস ধরে সন্দেশখালিতেও ঘটনার ঘনঘটা লেগে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে ইডি ঢুকল। সেই নিয়ে গোলমাল করে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। ওখানে আরএসএসের বাসা রয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী ওই বক্তব্য নিয়ে শুক্রবার সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে অপরাধী এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা নতুন নয়। শাহজাহান অন্তরাল থেকে বার্তা দিয়েছেন ‘আমি সুভাষ বলছি’ ভঙ্গিতে। আর মমতা সেই অন্তরালে থাকা শাহজাহানকে বার্তা দিলেন বিধানসভা থেকে।’’ রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের দুটো জিনিস প্রয়োজন। এক, টাকা। দুই, ভোট করানোর লোক। শাহজাহান দুটোই দেন দলকে। ভোটও করান, লোকের জমি দখল করে ভেড়ির টাকার ভাগও পৌঁছে দেন। পার্থবাবুর বান্ধবীর বাড়িতে যে পরিমাণ নোট উদ্ধার হয়েছিল, তাতে হয়তো তৃণমূলনেত্রী বুঝেছিলেন ওঁরা একা খাচ্ছেন! ৭৫:২৫ অনুপাত সঠিক ভাবে মানা হয়নি। তাই পার্থের পাশে মমতা দাঁড়াননি।’’ পাশাপাশি রাজর্ষির এ-ও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল যাঁদের পাশেই দাঁড়ায়, তাঁদের দু’টি মৌলিক গুণ রয়েছে। টাকা এবং ভোট করানোর দক্ষতা। অনুব্রত মণ্ডল থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক—এ কথা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’’

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের আবার পাল্টা যুক্তি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বারও বলেননি শাহজাহান নির্দোষ। তিনি ইডির রণকৌশল সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, নির্দিষ্ট এক জনকে ‘টার্গেট’ করে সেখানে ঢুকে গন্ডগোল পাকিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।’’ তবে তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বিবিধ কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে আশঙ্কা গোপন করছেন না। লোকসভা ভোটে ‘ফাঁকা মাঠের’ আশঙ্কা নিয়ে জল্পনা রয়েছে শাসকদলে। যার মধ্যে তৃণমূলের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। ঘটনাচক্রে, যা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা। তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, এনআইএ-কে ব্যবহার করে পূর্ব মেদিনীপুরের এলাকার পর এলাকা ফাঁকা করানো হচ্ছে। পর পর তৃণমূলের নিচুতলার সংগঠকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

তৃণমূল বা মমতা কেন পার্থের পাশে সে ভাবে দাঁড়াননি, তা স্পষ্ট। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘ওখানে সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স (পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ) ছিল। মানুষ টাকার পাহাড়ের ছবি দেখেছিলেন।’’ আবার জ্যোতিপ্রিয় তথা বালুর কেন মন্ত্রিত্ব যায়নি সেই প্রশ্নে অভিষেকের যুক্তি ছিল, ‘‘ইডি বা সিবিআই ভগবান নয়, যে তারা কাউকে গ্রেফতার করলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে!’’ অনেকের মতে, শাহজাহানের ক্ষেত্রেও তৃণমূল হয়তো সেই লাইনেই হাঁটতে চাইছে। অর্থাৎ, ইডি কারও বাড়িতে গেল মানেই তিনি ‘অপরাধী’ নন। তবে ভবিষ্যতে যে বালু মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন, সেই ইঙ্গিতও অভিষেক দিয়েছিলেন। তবে মমতা এখনও পর্যন্ত বালু সম্পর্কে যা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট যে, তিনি রাজ্যের ওই মন্ত্রীর গ্রেফতারিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসাবেই দেখছেন।

এর আগে মমতা বা তৃণমূল দল যাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বা দাঁড়িয়েছে, তাঁরা সকলেই ‘ওজনদার’ নেতা। বালু এখনও মন্ত্রী। গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সংগঠনে তাঁর প্রভাব ছিল। এখনও যে নেই, তা বলা যাবে না। অনুব্রত বীরভূমকে তৃণমূলের ‘গড়’ তৈরি করেছিলেন। লাগোয়া পূর্ব বর্ধমানের একাধিক ব্লকেও অনুব্রত ছিলেন ‘শেষ কথা’। কিন্তু শাহজাহান একেবারেই ব্লক স্তরের নেতা। জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ হলেও সন্দেশখালির দু’টি ব্লকের বাইরে তাঁর তেমন বিচরণ ছিল না। অন্তত সাংগঠনিক বিষয়ে। সেই শাহজাহানের ‘পাশে দাঁড়ানো’ বিবিধ অর্থে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE