বর্ধমান স্টেশনের ঘটনাস্থলে তখন চলছে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ। আর কোনও বিপত্তি যাতে না হয়, সে জন্য বসানো হচ্ছে লোহার খাঁচাও। রবিবার সকালে। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী
শতাব্দী প্রাচীন এই ভবন নিয়ে আবেগ রয়েছে শহরবাসীর। সময়ের সঙ্গে সেটির প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণেরও দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। সেই রকম উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণেই কি দুর্ঘটনা ঘটে গেল বর্ধমান স্টেশনে, প্রশ্নটা তুলছেন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকে।
চেনা স্টেশনের সামনের অংশ হুড়মুড় করে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার রাতে পূর্ত দফতরের বর্ধমান বিভাগের বেশ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ছুটে যান ঘটনাস্থলে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন ভবন বিশারদ। তাঁরা মনে করছেন, প্রাচীন ভবনটির উপর ঠিকমতো নজরদারি তো দূর, কাঠামোগত বৈশিষ্টকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি দিনের পর দিন। ওই ঘটনার পরে, শনিবার রাতে বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছন ডিআরএম (হাওড়া) ইশাক খান-সহ রেলের আধিকারিকরা। তাঁরা জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী, পূর্ত দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ভজন সরকারদের সঙ্গে কথাও বলেন। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়বে।
স্টেশন চত্বরের ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য ভবনের থামগুলির প্লাস্টার চটানো-সহ নানা কাজ চলছিল। সে জন্য ‘ড্রিল’ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছিল। তার কম্পনেই থামের ভিত নড়ে গিয়েছিল কি না, প্রশ্ন উঠছে সে নিয়ে।
অকুস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে এক ভবন বিশারদের দাবি, ভবনের ভেঙে পড়া অংশ বা আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা দাঁড়িয়ে রয়েছে লোহার কড়ি-বর্গার উপরে। তার উপরে লোহার জাল ফেলে ইটের আচ্ছাদন পাতা হয়েছে। তা ধরে রাখার জন্য ইটের থাম বা কলাম তৈরি হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন এই থামগুলির ইটে ক্ষয় ধরেছে। রেল সে দিকে নজর না দিয়ে ঝুল-বারান্দায় ইটের আচ্ছাদনের উপরে পিচ, ঢালাই করেছে। সে ভারই সম্ভবত সহ্য করতে পারেনি থামগুলি। একটি থাম নড়বড়ে হতেই বারান্দার একাংশ ভেঙে গিয়েছে। থামের সঙ্গে কড়ি-বর্গাও নড়ে যাওয়ায় ধাপে-ধাপে ভবনের অংশ ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
ওই ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, পুরনো ভবন সংস্কার করে সৌন্দর্যায়ন করতে গেলে আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তা ঠিকমতো হয়নি বলে মনে করছেন তাঁরা। রবিবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রেলের এক কর্তাও দাবি করেন, ‘‘ট্রেনের কম্পনে কাঁপত থামগুলি। তার উপরে প্লাস্টার চটানোর জন্য ইটের গায়ে ‘ড্রিল’ যন্ত্র ব্যবহারের কম্পন থাম সহ্য করতে পারেনি। শুধু ইটের গা নয়, মূল ভিতও নড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকের দাবি, ভবনের উপরিভাগ ঝাঁ-চকচকে করে রাখায় ভিতরে ক্ষতির শিকড় কতটা, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল ছিল।
স্টেশনের হকার ও সাফাইকর্মীদের একাংশের দাবি, শৌচাগারের জল ও বৃষ্টির জল জমে থাকত বারান্দায়। দীর্ঘদিন পরে তা সাফ হত। তাতেও ইটের থামের ক্ষতি হতে পারে। ভবন বিশারদদের মতে, নানা ভাবেই ‘নির্যাতন’ চলছিল, তাই এমন পরিস্থিতি হল ঐতিহ্যবাহী ভবনটির।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, স্টেশনের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির পরিকাঠামোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এই ঘটনার পরে ফের তা করানোর নির্দেশ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy