মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্লচন্দ্র চাকীকে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কেন বলা হয়েছে, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
শুক্রবার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাল কংগ্রেস। একই দিনে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে এসইউসি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনও।
শুক্রবার কংগ্রেসের ১০ সদস্যের পরিষদীয় দল রাজভবনে যায়। পরে তাঁদের নেতা মহম্মদ সোহরাব বলেন, “আমরা রাজ্যপালের কাছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় নৈরাজ্যের কথা জানিয়েছি। ইতিহাস বইতে যে ভাবে ক্ষুদিরামের মতো বিপ্লবীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের ক্ষোভের কথাও বলেছি।” বিকেলে বিকাশ ভবনে যান এসইউসি প্রভাবিত মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির কিছু সদস্য। শিক্ষামন্ত্রী দফতরে না থাকায় তাঁর ব্যক্তিগত সচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন শিক্ষক নেতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, “ক্ষুদিরামের মতো বিপ্লবীকে সন্ত্রাসবাদী বলা আপত্তিকর। এ নিয়ে ফোনে শিক্ষামন্ত্রীকে আমাদের কথা জানিয়েছি।”
ইতিহাসবিদদের অনেকে অবশ্য বলছেন, ইতিহাসচিন্তার দিক থেকে ‘বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ’ কথাটি বহুল ব্যবহৃত এবং তা মোটেই আপত্তিকর নয়। এর আগে বিপান চন্দ্র ও সুমিত সরকারের বইতেও ক্ষুদিরামের মতো সশস্ত্র বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। পর্ষদের পাঠ্যবই রচনার দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা শিরিন মাসুদ। তাঁর ব্যাখ্যা, সন্ত্রাসবাদের যে চেহারা এখন দেখা যায়, তার সঙ্গে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। “ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকীরা আক্রমণের জন্য ঔপনিবেশিক শাসককে বেছে নিতেন। কিন্তু এখন সন্ত্রাসবাদীরা নির্বিচারে নিরীহ মানুষকে খুন করে।”
প্রবীণ শিক্ষকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গটির বৃহত্তর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা রয়েছে। সেটি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্যক্রমে রাখা যেতে পারে। কিন্তু অষ্টম শ্রেণির কিশোর-কিশোরীদের কাছে তার ব্যাখ্যা সহজে বোধগম্য হওয়ার নয়। ফলে তাদের কাছে এই শব্দবন্ধ থেকে বিপ্লবীদের সম্পর্কে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক প্রবীণ শিক্ষকের মতে, “স্বাধীনতা সংগ্রামের এই পর্যায়কে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ না বলে সশস্ত্র সংগ্রাম বা বিপ্লবী জাতীয়তাবাদ বলেও অভিহিত করা যেত। সে ক্ষেত্রে এই বিতর্কের অবকাশ থাকত না।” ইতিহাসের প্রবীণ শিক্ষক অতীশ দাশগুপ্তের ব্যাখ্যা, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকীদের আত্মত্যাগকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। “এঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামী। এঁদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী শব্দটি ব্যবহার করা যায় না।”
শিরিন মাসুদ মেনে নিচ্ছেন, বাস্তব প্রেক্ষিতটা বিচার করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদের শিরোনাম না-বদলে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে বর্তমান সন্ত্রাসবাদের পার্থক্য নিয়ে টীকা জুড়ে দেওয়া বেশি সঙ্গত বলেই তাঁর মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy