তৃণমূলের অডিট রিপোর্ট নিয়ে এ বার আসরে নামল নির্বাচন কমিশন।
গত ২০১১-’১২ আর্থিক বছর থেকে আয়কর দফতর ও নির্বাচন কমিশনে দল আয়-ব্যয়ের যে হিসেব দাখিল করেছে, তা ঘিরে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশ্ন তুলেছে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তকারী দুই সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। আনন্দবাজারের পক্ষ থেকেও খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, যিনি তৃণমূলের আয়-ব্যয় অডিট করেছেন, সেই প্রাণকুমার চক্রবর্তী গত চার বছর ধরে অ্যালঝাইমার্সের রোগী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অফিসই খোলেন না বলে দাবি তাঁর পরিবারের। ফলে অডিট কে করলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া, যে অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে অডিটরের সইয়ের নীচে তাঁর নাম বা ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ায় তাঁর সদস্য-সংখ্যা (রেজিস্ট্রেশন নম্বর) লেখা নেই। বুধবার আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া রিজিওনাল কাউন্সিল) চেয়ারম্যান প্রমোদদয়াল রুংতা জানিয়েছিলেন, এই জিনিসগুলো না-থাকার কারণে ওই অডিট বৈধ নয়। আর অডিট রিপোর্টের মুখবন্ধের একটা ধরাবাঁধা বয়ান থাকে। কিন্তু তৃণমূলের জমা দেওয়া অডিট রিপোর্টে যে বয়ান রয়েছে, তা অন্য রকম। ফলে ওই মুখবন্ধ কোনও পেশাদারের লেখা নয় বলেই মত প্রকাশ করেন রুংতা।
এই অবস্থায় তৃণমূলের পেশ করা অডিট রিপোর্ট বৈধ কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার সহায়তা চাইল নির্বাচন কমিশন। ইনস্টিটিউটকে চিঠি দিয়ে কমিশন জানতে চেয়েছে, অডিট রিপোর্টে অডিটরের সইয়ের নীচে স্পষ্ট ভাবে তাঁর নাম এবং সদস্য-সংখ্যা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক কি না। সংশ্লিষ্ট অডিটরের অডিট করার এক্তিয়ার আছে কি না এবং তৃণমূল যে অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেটি বৈধ কি না, তা-ও ইনস্টিটিউটের কাছে জানতে চেয়েছে কমিশন। কমিশনের কর্তাদের একাংশ আজ বলেন, তৃণমূলের মতো দীর্ঘদিনের স্বীকৃত একটি রাজনৈতিক দল কী ভাবে এমন রিপোর্ট জমা দিল, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। তা-ই ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তাঁরা বিষয়টি ভাল করে বুঝতে চাইছেন।
যদি দেখা যায় যে তৃণমূলের জমা দেওয়া অডিট রিপোর্ট অবৈধ, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে— এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। বিষয়টি জানতে চেয়ে কমিশনের তরফে রাজনৈতিক দলগুলির আয়-ব্যয়ের বিষয়গুলি দেখেন এমন এক শীর্ষকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনিও কোনও দিশা দেখাতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা ভূ-ভারতে কোথাও আগে হয়েছে বলে তো শুনিনি। কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই এর আগে এ ধরনের কোনও অভিযোগ ওঠেনি। এই প্রথম বার এ রকম একটি অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে।’’ ফলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি বলে প্রমাণিত হলে কী শাস্তি দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে কোনও ধারণাই কমিশনের নেই বলে দাবি করছেন ওই শীর্ষকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ প্রমাণ হলে বিষয়টি কমিশনের পুরো বেঞ্চের কাছে তুলতে হবে। তাঁরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা কেউ কেউ আবার দাবি করছেন, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, আয়কর বিভাগের কাছেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত অডিট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই আয়কর ছাড়ের জন্য আবেদন করে রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূল যদি ভুল অডিট রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে আয়কর ছাড় পেয়ে থাকে, তা হলে সেটা বেআইনি হিসেবে গণ্য হবে বলেই ওই আধিকারিকদের মত। সে ক্ষেত্রে আয়কর দফতরকেও ভাবতে হবে, কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy