সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।
মোবাইল বাজেয়াপ্ত হয়েছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কাছ থেকে। কিন্তু সেখানে পাওয়া অডিয়ো ক্লিপের এক প্রান্তের গলা যে ‘কাকু’র, তা প্রমাণ করতেই সুজয়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চাইছে ইডি। কারণ প্রথমত, সুজয়ের গলার স্বরের নমুনার সঙ্গে অডিয়ো ক্লিপের কণ্ঠস্বর মিলে গেলে তবেই আদালতে তা গ্রাহ্য হবে প্রামাণ্য নথি হিসেবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি, সে ক্ষেত্রে অডিয়ো ক্লিপের অপর প্রান্তে থাকা ‘প্রভাবশালীদের’ তার ভিত্তিতে তলব করতে পারবে ইডি। দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার প্রমাণ খুঁজতে তাঁদের কণ্ঠস্বরের নমুনাও একই ভাবে পাঠানো হবে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে।
তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঠিক এ ভাবেই কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল নারদ-কাণ্ডের তদন্তে। সে বার ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে আসা সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল এ রাজ্যের একাধিক প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। লুকিয়ে ভিডিয়োও তোলেন। তার আগে ও পরে তাঁদের অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তা রেকর্ড করে রাখেন। সেই সমস্ত অডিয়ো ও ভিডিয়ো ক্লিপ আদালতে প্রামাণ্য নথি হিসেবে পেশ করার আগে এক দিকে যেমন ম্যাথুর গলার স্বরের নমুনা নিয়ে তা মিলিয়ে দেখা হয়েছিল, তেমনই তা করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের অনেকের ক্ষেত্রেও। ওই কণ্ঠস্বরের নমুনা মিলে যাওয়ার পরেই তা গ্রাহ্য হয়েছিল আদালতে প্রমাণযোগ্য নথি হিসেবে।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এই সমস্ত ক্ষেত্রে যিনি ‘হাতের কাছে’ থাকেন (নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে যেমন ‘কাকু’), আগে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়। তা না মিললে, অডিয়ো ক্লিপটিকে ‘ভুয়ো’ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু মিলে গেলে, তখন পরীক্ষা করা হয় ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তির গলার স্বরের নমুনাও। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সুজয়ের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি প্রবল মানসিক চাপে রয়েছেন। তার উপরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে। এই অবস্থায় গলার স্বরের নমুনা নিতে গেলে সমস্যা হতে পারে বলেই নাকি তার অনুমতি দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা।
কিন্তু ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, সুজয় হৃদ্রোগী মাথায় রেখে প্রথমে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা হবে তিনি কতটা মানসিক চাপ নিতে পারবেন। তার পরে সেই অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত অডিয়ো ক্লিপ থেকে সুজয়ের বলা অন্তত ১৫-২০ শব্দের একটি লাইন বেছে নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নিরপেক্ষ সাক্ষী ও মামলার তদন্তকারী অফিসারের সামনে প্রায় ১২ ধরনের বাচনভঙ্গিতে সুজয়কে ওই একই কথা বলতে বলবেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘একই বাক্য কখনও স্বাভাবিক ভাবে, কখনও সামান্য জোরে, কখনও চিৎকার করে, কখনও নিচু স্বরে, কখনও বা উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলতে হবে। সাধারণত এক জন বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতি ও মনের অবস্থা অনুযায়ী ১১-১২ ধরনের ভঙ্গিতে কথা বলেন। তার প্রতিটিরই নমুনা নিয়ে রাখাই দস্তুর।’’ যাতে মিলিয়ে দেখতে অসুবিধা না হয়।
ইডি সূত্রে দাবি, রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির এক জন বিশেষজ্ঞ সুজয়ের গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করবেন। ওই ল্যাবরেটরি ছাড়াও ভিন্ রাজ্যে অত্যাধুনিক ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতেও ওই গলার স্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। তার পরে তা আদালতে জমা দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, যে সমস্ত ‘সুজয়ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীর’ সঙ্গে ‘কাকু’র অডিয়ো ক্লিপ হাতে এসেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাঁদের অনেককেও সেই ক্লিপশোনানো হয়েছে। এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দু’তরফের গলার স্বর মিলে গেলে, তা আদালতে প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।
এই পরিস্থিতিতে এর আগে সুজয়ের গলা পাল্টে দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিজেপি। এ দিন আবার তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “সুজয়ের ক্ষেত্রে বড় কোনও ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাঁকে সিসি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা দরকার। ওঁর কণ্ঠস্বর ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তা ব্যবহার করে ইডি হয়তো কালীঘাটেও পৌঁছে যেতে পারে।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা জবাব, ‘‘এ রকম কোনও গোপন পরিকল্পনার কথা ওঁর (নওসাদ) জানা আছে কি না, জানি না। নওসাদের সঙ্গে তো বিজেপিরও ভাল সম্পর্ক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy