ফাইল চিত্র।
পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতি তৈরি হল। তা একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সংশয় উস্কে দিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত।
১০৭টি পুরসভার নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয় শুক্রবার। বিকেল চারটে নাগাদ তৃণমূল নেতৃত্ব প্রায় হাজার তিন প্রার্থীর নাম সংবলিত পুস্তিকা দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই তালিকা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমোদন করেছেন। সব জেলা সভাপতির কাছে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজেদের জেলা থেকে তাঁরা সেগুলি জানিয়ে দেবেন।’’ ওই সময়ে তালিকা তৈরির কাজে মূল ভারপ্রাপ্ত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন ফিরহাদ (ববি) হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বুধবারের সাংগঠনিক নির্বাচনের পরে মমতা জাতীয় কর্মসমিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপাতত এঁদের দায়িত্ব দিয়েছেন।
পরিস্থিতি ঘোরালো হয় এর পরে। কারণ, তৃণমূলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং মিডিয়া গ্রুপে বিশদ প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়। তার পরেই খবর রাজ্যের নানা জায়গা থেকে বিক্ষোভ, অবরোধ, প্রতিবাদের খবর আসতে থাকে। একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়ক তাঁদের অসন্তোষের কথা জানাতে থাকেন দলের উপরতলায়। এই অবস্থায় পার্থবাবু ঘোষণা করেন, ‘‘এআইটিসি’র সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ওই তালিকা সঠিক নয়। কারণ সেগুলিতে নেতৃত্বের কোনও স্বাক্ষর নেই। স্বাক্ষর-সহ তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে।’’
দলের সরকারি প্রচারমাধ্যমে ‘ঠিক’ তালিকা প্রকাশিত হয়নি বলে জানাচ্ছেন দলীয় নেতৃত্বই। ফলে সংশয়, বিভ্রান্তি এবং প্রশ্ন চরমে পৌঁছয়। সন্ধ্যার পরে আবার বক্সী এবং পার্থর সই করা ‘ঠিক’ তালিকা প্রকাশিত হয়। তাতে কিছু রদবদলও দেখা যায়। কিন্তু আগের তালিকাটি কারা, কী ভাবে, কার সম্মতিতে প্রকাশ করেছিলেন, রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, দলের অফিশিয়াল মাধ্যমগুলি দেখভালের দায়িত্ব পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের। তালিকায় বিভ্রান্তি নিয়ে আইপ্যাকের প্রাক্তন কর্ণধার প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে পার্থবাবুর ফোনে একাধিক বার কথা কাটাকাটি হয় বলে জানা গিয়েছে।
তার আগে আইপ্যাক ‘নিয়ন্ত্রিত’ তৃণমূলের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তালিকা দেখে নেতৃত্বের কাছে ক্ষোভ জানান দমদমের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও কয়েক জন। তাঁদের ক্ষোভ, এই তালিকায় তাঁদের ‘রাজনৈতিক স্বার্থ’ দেখা হয়নি। ‘উপযুক্ত’ লোকেদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, বিষয়টি মমতার কানেও পৌঁছয়। এর পরে দ্রুত ‘প্রকৃত’ তালিকা প্রকাশে উদ্যোগী হন বক্সী, পার্থরা। জেলায় জেলায় সেই তালিকা যেতে শুরু করে সন্ধ্যার পর থেকে।
ইতিমধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে একাধিক জেলায়। উত্তরে জলপাইগুড়ি-সহ দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ, বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদি দেখা যায়। রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন জেলার নেতা তথা মন্ত্রী অখিল গিরি। অখিল বলেন, ‘‘আমাদের পাঠানো তালিকা দল গ্রহণ করেনি।’’ এই পরিস্থিতিতে পুরভোটের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চেয়েছেন তিনি।
তবে ‘প্রকৃত’ তালিকা প্রকাশের পরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, রাতেও তা পরিষ্কার নয়। যদিও দলীয় নেতৃত্বের দাবি, প্রার্থী তালিকা নিয়ে সবাই সব সময়ে সন্তুষ্ট হয় না। প্রথমে কম-বেশি ক্ষোভ থাকে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভোটের সময়ে দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়তে নামে। এটাই বাস্তব।
ব্যতিক্রম ছাড়া এ বারের পুরভোটে বিধায়কদের প্রার্থী করেনি তৃণমূল। ফলে পুর-প্রতিনিধিত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন মন্ত্রী সুজিত বসু, কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, দিনহাটার উদয়ন গুহ, কান্দির অপূর্ব সরকারের মতো বেশ কয়েক জন। কলকাতার ক্ষেত্রে অবশ্য এই নিয়ম অনেকটাই শিথিল ছিল। দলের দাবি, একই পরিবারে একাধিক প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতিক্রম আছে। রাজনৈতিক প্রয়োজন বিবেচনা করে অনেক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy