অপেক্ষা: লাদাখে নিহত জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের দেহ আসার প্রতীক্ষায় তাঁর বাড়ির সামনে বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়ায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
দীর্ঘ অপেক্ষাই সার হল। মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়ার বাড়িতে বৃহস্পতিবার ফিরল না লাদাখে চিনা হামলায় নিহত জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের মৃতদেহ। দূর-দূরান্ত থেকে রাজেশকে একবার চোখের দেখা দেখতে আসা বহু মানুষ ফিরলেন নিরাশ হয়ে। আজ, শুক্রবার সাত সকালে রাজেশের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছনোর কথা।
বুধবার সন্ধ্যায় খবর আসে যে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে আসবে রাজেশের মৃতদেহ। তাই এ দিন সকাল থেকেই পুরো গ্রামে বসানো হয় পুলিশি পাহারা। সকাল থেকেই গ্রামের যুবক-সহ পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মুখ থেকে রাজেশের বাড়ি পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও বাড়ির চারপাশে লাগানো হয় রাজেশের ছবি ও ব্যানার। সকাল থেকেই গ্রামে চলে আসেন পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকেরা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও এ দিন এসে দেখা করেন নিহতের পরিবারের সঙ্গে। গ্রামবাসীর উদ্যোগে ব্যবস্থা করা হয় নিহত পরিবার ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য খাবারের। এ দিন সকাল দশটা নাগাদ কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় রাজেশের বাড়িতে এসে সমবেদনা জানান ও রাজেশের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। তবে শুধু কৃষিমন্ত্রী নন, পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি— সব দলের প্রতিনিধিরাই এসে উপস্থিত হয়েছিলেন।
কেবল রাজনৈতিক নেতা কর্মীরাই নন, মহম্মদবাজার ব্লকের বহু মানুষ এ দিন বেলগড়িয়া গ্রামে আসেন রাজেশকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এ দিন সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, রাজেশের আত্মীয় পরিজনরা ছাড়াও আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর মানুষের ভিড় করেছেন শেষ বারের মত তাঁকে একবার দেখার জন্য।
দুপুর থেকেই রাজেশের বাড়ি থেকে জাতীয় সড়ক যাওয়ার রাস্তার দুই পাশ ও সমাধি স্থলের চারপাশে ভিড় জমাতে থাকেন এলাকাবাসী। মহম্মদবাজারের কাঁইজুলি থেকে বেশ কিছু এলাকাবাসী মিছিল করে রাজেশকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যও আসেন। সাঁইথিয়া, সিউড়ি, মল্লারপুর, রামপুরহাট থেকেও বহু মানুষ আসেন। তবে দিনভর অপেক্ষাতেই কাটে সবার।
এ দিন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না রাজেশের মা মমতা, বাবা সুভাষ ও বোন শকুন্তলা কেউই। শোকে কাতর হয়ে তাঁরা সকলেই শয্যাশায়ী। তাঁদের আগলে রাখেন পড়শিরাই। সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন অনেক অচেনা মানুষ। রাজেশের বাড়িতে আগতদের যেন কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকেই।
বিকেল নাগাদ খবর আসে এ দিনও বাড়িতে ফিরছে না রাজেশের মৃতদেহ। পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে আগত সকলেই তখন খানিকটা নিরাশ হয়ে পড়েন। রাজেশের ভাই অভিজিৎ ওরাং বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী থেকে খবর দেওয়া হয় শুক্রবার সকালেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে মৃতদেহ।’’ নিহত রাজেশকে একবার চোখের দেখা দেখতে সিউড়ির থেকে এসেছিলেন কানাই বিত্তার, বাপি কাহার। মহম্মদবাজার থেকে যান বাসিন্দা প্রণব সরকার ও কৌশিক মণ্ডল। তাঁরা সকলেই বলেন, ‘‘রাজেশ আমাদের গর্ব। ওকে সম্মান জানাতে দিনভর অপেক্ষা করেছি। আবার সকালে আসব।’’
রাতে রাজেশের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানান বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও সৌমিত্র খাঁ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজেশের পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে সাহায্য করার যে কথা জানিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে লকেট বলেন, ‘‘সাহায্যের কথা অনেক জায়গায় শুনেছি। শেষবার পুলওয়ামাতে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের একজনের পরিবারে এখনও কেউ চাকরি পাননি। আমরা দেখতে চাই উনি যেরকম কথা বলেছেন সেরকম কাজটাও যেন হয়।’’ তাঁর প্রস্তাব, ‘‘আমরা চাই যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের নামে স্কুল, রাস্তা, গ্রামের নাম রাখা হোক। এইভাবেই তাঁরা আমাদের মধ্যে জীবিত থাকবেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এর জন্য আবেদন জানাব।’’
তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন তাই করেন। তিনি খবর পাওয়া পরেই নিহতের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ও সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক চলে এসেছে। আজ, শুক্রবার পরিবারের হাতে সেই টাকা তুলে দেওয়া হবে। কেন্দ্র সরকার কী করবে, কী না করবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে মুখ্যমন্ত্রী যখন চাকরির কথা বলেছেন তখন নিশ্চয় চাকরি দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy