জনগণনা পর্ব মিটলেই ছিটমহল বিনিময়ে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে ঢাকায় বৈঠকে বসবেন ভারত ও বাংলাদেশের আধিকারিকরা।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৩ জুলাই ওই বৈঠকের দিন চূড়ান্ত হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটি এই বৈঠকের উদ্যোক্তা। ইতিমধ্যে ছিটমহল লাগোয়া বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের কাছেও বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কোচবিহারের জেলাশাসকের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আয়োজিত ওই বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। এছাড়াও বাংলাদেশের পঞ্চগড়, লালমণিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি এই চারটি জেলার প্রশাসনের কর্তাদেরও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা। ছিটমহলে জনগণনা সংক্রান্ত টাটকা রিপোর্ট, দেশ বদলে আগ্রহী বাসিন্দাদের পরিসংখ্যান, পুনর্বাসনের পাশাপাশি দু’দেশের নতুন সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। উঠতে পারে ২০১১ সালের জনগণনায় তালিকাভুক্ত হননি এমন অভিযোগ তুলে সাম্প্রতিক জনগণনায় নাম নথিভুক্তির দাবির প্রসঙ্গও। সবমিলিয়ে বৈঠক ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১১ সালের গণনার তালিকা সামনে রেখেই এবার কাজ হচ্ছে। সোমবার থেকে ওই কাজ শুরু হয়েছে। ফলে এখনই ওই দাবিদারদের ব্যাপারে কিছু করার নেই। তবে ওই বছর কেউ কোনও কারণে তালিকায় নাম ওঠাতে পারেননি বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে, ছিটমহল সংক্রান্ত পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি তুলব।” কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমি নিজে ছিটমহলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছি। গণনার কাজ দেখেছি। অনেকেই তথ্য না জানায় ২০১১ সালের জনগণনায় নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করাতে পারেননি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি জেলাশাসককে বলেছি। মুখ্যমন্ত্রীকেও জানাব। প্রকৃত ছিটমহলবাসীরা একজনও বঞ্চিত হন তা চাইছিনা।”
প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২ টি ছিটমহলের অস্তিত্ব বিলোপের ব্যাপারে দুই দেশের সরকার ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ছিটমহলগুলির জনসংখ্যা পর্যালোচনার জন্য ২০১১ সালে দুই দেশের প্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগে করা জনগণনার পরিসংখ্যান মিলিয়ে নতুন করে গণনার কাজ শুরু হয়েছে সোমবার। চলছে দেশ বদলে আগ্রহীদের তালিকা তৈরির কাজও। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত কাজ চলবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যরাত থেকে সমস্ত ছিটমহল বিলোপ করা হবে। দু’দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে মিশে যাবে বিনিময় হওয়া পরস্পরের এলাকা। তার আগে পুনর্বাসন, আগ্রহীদের দেশ বদল সহ কোন ব্যাপারেই যাতে সমস্যা না হয় মূলত সেকথা মাথায় রেখে দুই দেশের আধিকারিক পর্যায়ে ফের আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ ২০১১ সালের গণনায় তালিকাভুক্ত হতে না পারেননি বলে কিছু মানুষের অভিযোগের কথা শুনেছি। তবে ১৬ জুলাই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গণনার কাজ শেষের আগে ওই ব্যাপারে আমরা মাথা ঘামাতে চাইছিনা। চলতি গণনা কাজ মিটলে আলোচনা করে ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” ইন্ডিয়ান এনক্লেভস পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা নেপাল মিত্র বলেন, “২০১১ সালের তালিকাভুক্তদের ভিত্তি ধরে বাসিন্দাদের বাছাই করা হলে প্রকৃতদের অনেকেই বঞ্চিত হবে। ২০১১ সালের গণনায় প্রচুর মানুষ নানাকারণে নাম তুলতে পারেনি। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই ওই সমস্যার সমাধান করা দরকার। না হলে অনশন আন্দোলনের কথাও ভাবা হচ্ছে।” এদিকে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের জনগণনা পর্বও নির্বিঘ্নে মিটেছে বলে প্রশাসনের দাবি। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির অবশ্য অভিযোগ, মাথাভাঙার কয়েকটি ছিটমহলে নির্দিষ্ট শিবিরে কর্মীরা বসেননি। নাম নথিভুক্ত করাতে সমস্যায় পড়েন স্থানীয়রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy