জল ছবি: (বাঁ দিকে) রাস্তা জলমগ্ন হওয়ায় হুগলির খানাকুলের রাধাবল্লভপুর থেকে বিয়ে করে নৌকায় বর-বউ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
ভারী বৃষ্টি আর হয়নি। জলাধার থেকে বিপুল জলও ছাড়া হয়নি। রাজ্যের কিছু এলাকা বাদে বন্যার জল নামতে শুরু করেছে সর্বত্র।
হুগলির আরামবাগ মহকুমার পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। খানাকুলের দু’টি ব্লক এবং পুরশুড়া থেকে জল নামছে না। বাড়ছে ত্রাণের দাবি। রবিবারও এখানে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণে চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বয়েছে। উদ্ধারকাজ চলেছে। জলস্রোতে শনিবার খানাকুল-১ ব্লকের সাতপৈঠা গ্রামের কাইফ মল্লিক (১৭) নামে এক তরুণ তলিয়ে গিয়েছিল। রবিবার দেহ মেলে।
খানাকুলের দু’টি ব্লক ছাড়াও পুরশুড়ার ৮টি পঞ্চায়েতই এখনও জলমগ্ন। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামপুর, চিলাডাঙি, পুরশুড়া-১ এবং শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত। এখানে ত্রাণের দাবি উঠছে। গোঘাটের হরিহরপুরে ত্রাণের দাবিতে এ দিন বিক্ষোভ দেখান বানভাসিরা। নৌকার অপ্রতুলতা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, ত্রাণ পর্যাপ্ত রয়েছে। তা বিলিও করা হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের একটা বড় অংশও এখনও জলভাসি। সেখানে জল নামতে খানিক সময় লাগবে। তবে অন্যত্র পরিস্থিতির অনেকখানি উন্নতি হয়েছে। ত্রাণ শিবির ছেড়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন দুর্গতেরা। প্রশাসন সূত্রে খবর, একদিনের মধ্যেই ত্রাণ শিবির ১২টি কমেছে। শিবির ছেড়ে ঘরে ফিরেছেন ১১৫৮ জন। মেদিনীপুরে কংসাবতীর জলস্তরও রবিবার নেমেছে। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার জলবন্দি এলাকা থেকে আবার পাম্প চালিয়ে জল ফেলা হচ্ছে কাঁসাই ও চণ্ডীয়া নদীতে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে বল্লুক-১ পঞ্চায়েতের এলাকার জল বের করতে সোয়াদিঘি খালের বাঁধ কাটা হয়েছে শনিবার রাতে।
এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন জলপ্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রবিবার বিকেল পর্যন্ত আসানসোল পুরসভার রানিগঞ্জের ডামালিয়া জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা যায়নি। এর ফলে, রানিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় এ দিনও প্রকল্পের জল পৌঁছয়নি। তবে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৬০টিরও বেশি ট্যাঙ্কারে জল পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ কোনার। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার থেকেই অজয় ও দামোদরের পাড়ে থাকা সাতটি করে মোট ১৪টি জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে, এ পর্যন্ত বারাবনির আমুলিয়া জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা যায়নি।
জল কিছুটা নামলেও পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটে অজয়ের আশপাশের কিছু জায়গা রবিবারও জলমগ্ন রয়েছে। শনিবার থেকে ভাগীরথীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় কালনার বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকে গিয়েছে।
রেকর্ড বৃষ্টিতে বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া, সোনামুখী ও পাত্রসায়র ব্লকের বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। শনিবার জল নেমে গিয়েছে গ্রামগুলি থেকে। ত্রাণ শিবির থেকেও বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন মানুষজন। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেগুলি ধাপে ধাপে মেরামতি শুরু হচ্ছে।”
বীরভূম জেলা প্রশাসনের হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে। ২৫টি পঞ্চায়েতের ১৯৩টি গ্রামে দুর্গতের সংখ্যা ৬০ হাজারেরও বেশি। বীরভূমে ক্ষয়ক্ষতির শীর্ষে নানুরের সুন্দরপুর। অজয়ের বাঁধ ভেঙে বৃহস্পতিবার রাতে জলমগ্ন হয় এই গ্রাম। এখন জল নামতে শুরু হয়েছে পুনর্গঠনের কাজ। বসানো হচ্ছে সাবমার্সিবল পাম্প। প্রশাসনের তরফে পরিবারগুলিকে দেওয়া হয়েছে রান্না-খাওয়ার সরঞ্জাম এবং চাল, ডাল, আনাজ। দেওয়া হয়েছে পোশাক, শুকনো খাবারও। জেলাশাসক জানিয়েছেন, সমস্ত দফতরকে নিয়ে গ্রাম পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হয়েছে।
এ দিন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জল নেমে গিয়েছে। তবে, চারটি পঞ্চায়েতে জল কিছুটা বেড়েছে। আমতা-২ ব্লকেও কিছু এলাকায় জল বেড়েছে। তবে, তা বিশেষ উদ্বেগের নয় বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দিনও উদ্ধারকাজ চলেছে।
জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানান, দু’টি ব্লকে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনও অবনতি হয়নি। উদয়নারায়ণপুরের কিছু এলাকায় জল কমছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy