অনুজ শর্মা
বাঁকুড়া সদর থানায় হামলা, সাঁতরাগাছি থানায় ঢুকে ভাঙচুর, বাগদায় চোলাই বিক্রেতাকে ধরতে গিয়ে মার খেয়ে ফিরে আসা— গত দু’মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এতে পুলিশের মনোবল যে তলানিতে ঠেকেছে, তা মানছে প্রশাসনেরই একাংশ। কিন্তু সেই মনোবল ফেরাতে যে পাল্টা পদক্ষেপ জরুরি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা না মেলায় হতাশা বাড়ছে বাহিনীর নিচুতলায়। এই পরিস্থিতিতে ‘আমরা তোমার পাশে আছি’ বার্তা দিতে বুধবার আচমকাই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক ডাকলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। বললেন, ‘‘পুলিশের মনোবল এতটুকু তলানিতে ঠেকেনি। যেমন শক্ত ছিল, তেমনই আছে।’’
সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা, হাল আমলে পুলিশের কর্তারা নবান্নে দোতলার পোডিয়ামে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কচিৎ-কদাচিৎ। কোনও ঘটনার সরকারি ব্যাখ্যা দেওয়া তো দূরের কথা, মোবাইল না ধরা, এমনকী এসএমএসের জবাব না দেওয়াটাই যেখানে দস্তুর হয়ে গিয়েছে নবান্নে। এ দিন কেন তবে উলট-পুরাণ? কী এমন হল, যাতে আইজি-কে এ ভাবে সাংবাদিকদের সামনে এসে অটুট মনোবলের কথা ঘোষণা করতে হল!
দু’টি ব্যাখ্যা উঠে আসছে ভিভিন্ন স্তরের পুলিশকর্মীদের আলোচনায়।
একটি অংশের ব্যাখ্যা, বুধবারই রাজারহাট-নিউটাউনের দুই সিন্ডিকেট নেতা, ভজাই সর্দার ও হায়দর ধরা পড়েছে। এদের অসামাজিক কাজকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন সেখানকার মানুষ। এবং এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশকেই কাঠগড়ায় তুলছিল বিরোধীরা। ঘটনাচক্রে এ দিনই বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে পুলিশ। পুলিশকেই ‘বোম’ মারার হুমকি দিয়েছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। মূলত তাই নিজেদের সাফল্য ফলাও করে জানানোরই সুযোগ নিলেন আইজি।
পুলিশেরই অন্য একটি অংশের ব্যাখ্যা, ক’মাস ধরেই খাস কলকাতা থেকে শুরু করে নানা জেলায় শাসক দলের লোকজনের হাতে নিগৃহীত হতে হচ্ছে পুলিশকে। কোথাও পুলিশের গায়ে হাত তুলেছে বিক্ষোভকারীরা, কোথাও বা থানা-গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার শাসানি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও উঁচুতলার কর্তাদের একাংশ তেমন উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হননি বলে অভিযোগ অনেকেরই। এতেই নিচুতলার পুলিশের মনোবলে যে চিড় ধরছে, পুলিশকর্তাদের একাংশ তা মানছেন। এই পরিস্থিতিতে পদস্থ কর্তারা যে বাহিনীর পাশে আছেন, সেই বার্তা দিতেই আইজি এ দিন সাংবাদিকদের সামনে এসে ঘোষণা করলেন, ‘‘আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী।’’ যথারীতি এড়িয়ে গেলেন অন্য অনেক প্রশ্নই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy