তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। ফাইল চিত্র।
তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহাকে টানা প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে ফিরল সিবিআই। এই সময়ের মধ্যে শুধু তিনিই নন, বেঙ্গালুরুতে তাঁর ছেলে সাগ্নিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআই পৌঁছে যায় হাওড়ার শ্যামপুরে কাঁঠানালি গ্রামে তাপস-ঘনিষ্ঠ প্রবীর কয়াল, তেহট্টে প্রবীরের স্ত্রী এবং তাপসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল নেত্রী ইতি সরকারের বাড়িতেও। টানা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির সময়ে প্রায় পুরোটাই তাপস ধীরস্থির ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সব সূত্রের দাবি। শুধু শুক্রবার মাঝরাতে এক বার তাঁকে উত্তেজিত গলায় বলতে শোনা যায়, “বিশ্বাস না হলে আমাকে গ্রেফতার করতে পারেন!”
সপ্তাহের শুরুতে, সোমবার ভোরে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থেকে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। শুক্রবার দুপুরে নদিয়ার তেহট্টে সিবিআই হানার পরে তাপসের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষ করে রাজ্য পুলিশের অপরাধ দমন শাখা যে ভাবে পুরো তদন্তটি মাঝপথে থামিয়ে দেয়, তাতে সন্দেহের অবকাশ ছিল বলে সব মহলেরই দাবি।
কিন্তু শুক্রবার মাঝরাত পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদ, এ দিন ভোরে তাপসের বাড়ির পিছনের পুকুর ও বাগানে তল্লাশি, পরে বিধায়কের গাড়ি তল্লাশির পরে তাপসকে গ্রেফতার না করেই ফিরে যান সিবিআই আধিকারিকেরা। তবে তাঁরা তাপসের দু’টি মোবাইল ফোন ও কিছু কাগজ নিয়ে যান। পরে তাপস দাবি করেন, এই তল্লাশি অভিযানের “নিট ফল জ়িরো!” তাঁর আরও দাবি, “আমি আগেও বলেছি যে, কোনও দুর্নীতিতে যুক্ত নই। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল।”
স্কুলে ও সরকারি দফতরে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগে প্রবীর কয়াল-সহ তিন জনকে আগেই গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা। কিন্তু তাপসকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রবীর এখন জামিনে মুক্ত। শুক্রবার সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফিরে যাওয়ার পরে প্রবীর দাবি করেন, কলকাতার এক রেস্তরাঁর কর্মী ছিলেন। ২০১৬ সালে তাঁর বিয়ে হয় নদিয়ার তেহট্টে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি ওই রেস্তরাঁতেই তাপসের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। প্রবীরের দাবি, চাকরির জন্য নানা জন তাঁকে টাকা দিত। তিনি তা বিধায়কের বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। ৩০-৪০ জনের থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা তিনি তাপসকে তুলে দিয়েছেন বলে দাবি। বিনিময়ে তাপস তাঁকে ৪২ লক্ষ টাকা দেন।
তাপস অবশ্য আগাগোড়া প্রবীরের এই সব দাবি অস্বীকার করে এসেছেন। এ দিন তিনি বলেন, “কে কোথায় কী বলল, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। ও একটা ঠগ। আমার যে সম্মান ছিল, ওর জন্য তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে তাপস অবশ্য মাথা ঠান্ডাই রেখেছিলেন। শুধু শুক্রবার মাঝরাতে, ডক্টর বি আম্বেডকর কলেজে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ সেরে সিবিআই যখন তাঁকে নিজের বাড়িতে ফেরত নিয়ে এসে ফের প্রশ্ন করতে শুরু করে, তখন এক বারই তাঁকে উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা গিয়েছিল, “বিশ্বাস না হলে আমাকে গ্রেফতার করতে পারেন!” এর পরেই সব চুপচাপ হয়ে যায়। বিধায়ককে বিশ্রাম করতে দেওয়া হয়। বাড়ির দোতলায় কয়েকটি ঘরে বিশ্রাম নেন সিবিআই অফিসারেরাও।
সকালে তাপসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিবিআই অফিসারেরা তেহট্টের বয়ারবান্ধায় গিয়ে প্রবীরের স্ত্রী পায়েল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়। পরে তেহট্টেই আসাতুল্লানগরে গিয়ে নদিয়া জেলা মহিলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ইতি সরকারের গোটা বাড়ি ঘিরে তল্লাশি চালানো হয়। একটি ঘরে বিভিন্ন নথিপত্র সামনে রেখে ইতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই অফিসারেরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে ইতি ও তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ সরকারের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে তাঁরা ফেরার পথ ধরেন। ইতি বলেন, “ওঁরা আমার ফোন ও ব্যাঙ্কের পাসবই দেখেছেন। কিছু পাননি। কিছু পাওয়ারও ছিল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy