Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জেলে দিলে পাল্টা জেল: মমতা

জেলে যেতে যে তিনি ভয় পান না, তা আগেই জানিয়েছিলেন। রসিকতার সুরে বলেছিলেন, বরং জেলে পাঠালে দিন কয়েক বিশ্রাম পাবেন। সেই হাল্কা চাল ছেড়ে বিজেপি মোকাবিলায় এ বার আরও আক্রমণাত্মক হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিতরণ: মালদহের সভামঞ্চে স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

বিতরণ: মালদহের সভামঞ্চে স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

জেলে যেতে যে তিনি ভয় পান না, তা আগেই জানিয়েছিলেন। রসিকতার সুরে বলেছিলেন, বরং জেলে পাঠালে দিন কয়েক বিশ্রাম পাবেন। সেই হাল্কা চাল ছেড়ে বিজেপি মোকাবিলায় এ বার আরও আক্রমণাত্মক হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মালদহে বিজেপির উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘জেলে দিলে জেলে যেতেও হবে।’’

নারদ এবং চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের সূত্রে বিজেপি নেতারা বার বার তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন। তাতে দলের নিচুতলার মনোবলে কিছুটা হলেও যে চিড় ধরেছে, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন তৃণমূল নেত্রী। তা সামাল দিতেই রণংদেহি মমতা এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের এক জনকে জেলে পাঠালে বিজেপির এক লক্ষ কর্মীকে সাধারণ মানুষ জেলে পাঠাবে।’’

বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তাঁর সরকার যে ঘর গোছাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত এ দিন দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, অনেক নেতার বিরুদ্ধে ‘কেস রেডি’ আছে। যেমন জলপাইগুড়িতে শিশু চুরির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘অনেকের বিরুদ্ধেই অনেক অভিযোগ রয়েছে। কানে কানে কথা বলো, শিশু চুরি নিয়ে কিছু বলো না!’’ এই মামলায় বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নামও জড়িয়েছে।

এ দিন কলকাতায় বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘মমতাজি বলেছেন, আমাদের সকলকে জেলে পাঠাবেন। কৃষ্ণের জন্ম তো জেলেই হয়েছিল। আমাদের জেলে যেতে আপত্তি নেই।’’ তৃণমূল নেত্রীর হুমকিতে কেন্দ্রের তদন্তে ঢিলে দেওয়ার যে প্রশ্ন নেই তা বুঝিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যারা গরিবের টাকা লুঠ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে। তারাও গ্রেফতার হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের ক্লিনচিট দিয়েছেন। প্রথমেই তিনি পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুভেন্দুর টাকার অভাব নেই যে ১ লক্ষ টাকা নেবে।’’ এর পরেই ফিরহাদ (ববি) হাকিম ও মুকুল রায়ের নাম করে তিনি বলেন, সকলেই বর্ধিষ্ণু পরিবারের। ১ লক্ষ টাকার জন্য কেউ জেলে যাবে না বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: নকশালবাড়ির জের, রাজারহাট ও চেতলা নিয়ে সতর্ক বিজেপি

বিজয়বর্গীয় অবশ্য এ দিন মুকুল, শুভেন্দু নয়— মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারকেই নিশানা করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমরা মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারীর সম্পত্তিতে নজর রাখছি না। নজর রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের সম্পত্তিতে। মুখ্যমন্ত্রী হাওয়াই চপ্পল পরে ঘুরতে পারেন। কিন্তু ‘ভাতিজা’র তো ১০০ কোটির বাংলো! সেই টাকা কোথা থেকে এল? তাঁর পরিবারের টাকা কোথা থেকে আসছে, কোথায় যাচ্ছে, সব তথ্য রয়েছে। শীঘ্রই তা প্রকাশ করব।’’

বিজেপি সূত্রের দাবি, নাম না-করে আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আক্রমণ করেছেন কৈলাস। যদিও তৃণমূলের একাংশ বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর ছয় ‘ভাতিজা’। ফলে কৈলাসের লক্ষ্য যে অভিষেকই, আগ বাড়িয়ে তা ধরে নেওয়ার কারণ নেই।

মমতা-কৈলাস দ্বৈরথ এ দিন ছড়িয়েছে নারদ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গেও। দিন তিনেক আগে বর্ধমানে কৈলাস বলেছিলেন, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করার জন্য সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই মন্তব্যের জেরে মমতার কটাক্ষ, ‘‘উনি কি সিবিআইয়ের চেয়ারম্যান? না ইডির ডিরেক্টর? নাকি প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কানে কানে বলেছেন!’’

যা শুনে কৈলাসের মন্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষই যা বলার বলছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE