প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরেও ২০১৪ ব্যাচের ৮ জন নতুন আইএএস অফিসারকে কেন পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে না, এ বার সেই প্রশ্ন তুলল রাজ্যের আইএএস অ্যাসোসিয়েশন। সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে অফিসারদের হেনস্থার একের পর এক ঘটনাতেও অসন্তুষ্ট আমলাদের এই সংগঠন।
সম্প্রতি নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-র সঙ্গে দেখা করে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি ও উদ্বেগের কথাগুলি জানানো হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজ্যের কৃষিসচিব সঞ্জীব চোপড়ার নেতৃত্বে কার্যকরী সমিতির প্রতিনিধি দল গত ১৩ জানুয়ারি দেখা করেন দুই শীর্ষ কর্তার সঙ্গে। মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে আমলাদের আর্জি ছিল, অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক সরকার। বৈঠকের কথা রাজ্যের সব আমলার কাছে ই-মেল করে জানিয়েছেন কৃষিসচিব। ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁরা এই দাবিগুলি জানাবেন বলে ঠিক করেছেন। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সময়ও চাওয়া হয়েছে।
কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের এই দাবি প্রথমেই ধাক্কা খেয়েছে। নবান্নের খবর, বৈঠকের পর ওই ৮ অফিসারকে মহকুমা শাসক করে পাঠাতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। ফলে তরুণ অফিসারেরা এখনও বিভিন্ন দফতরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ ছুটি নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন।
কেন পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে না?
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৪ ব্যাচের আইএএস অফিসারদের প্রশিক্ষণের শেষ পর্বে দিল্লিতে তলব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাধারণ নিয়মে নতুন আইএএস অফিসারেরা জীবনের প্রথম আট-দশ বছর বিডিও-এসডিও-ডিএম হিসাবে জেলায় কাজ করেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা বাড়াতে দিল্লির বিভিন্ন মন্ত্রকের কাজ দেখার জন্য তিন মাসের জন্য দিল্লিতে তলব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এতে বেজায় চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য ছিল, মগজ ধোলাই করতেই অফিসারদের দিল্লি ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এর পরে ওই অফিসারেরা নভেম্বরে রাজ্যে ফিরে এলেও কার্যত তাঁদের বসিয়েই রাখা হয়েছে। নবান্নের যুক্তি, দিল্লির পাল্টা হিসাবে রাজ্যেও নবীন আইএএস-দের তিন মাস বিভিন্ন দফতরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাজ শেখানো হবে। যদিও সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনও পোস্টিং দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। তাই আমলাদের সংগঠনের তরফে এই নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অফিসারদের পাঠানো ই-মেল বার্তায় সংগঠনের সভাপতি লিখেছেন, নবান্নে বা জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে আইএএস অফিসারেরা অনেক সময়ই বিনা বাধায় ঢুকতে পারছেন না। আমলা মহলের একাংশের বক্তব্য, সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চ থেকে বনসচিব চন্দন সিনহাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেছিলেন জেলার এসপি ভারতী ঘোষ। অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব বৈঠকে নির্দিষ্ট ভাবে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেন এবং বিহিত চান। এ ছাড়া বর্ধমানে আইএএস অফিসারদের নামে যে ভাবে পুলিশ মামলা করেছে, জি়জ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে— মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আমলারা।
পুলিশের উপর আইএএস-দের গোঁসার আরও একটি কারণ— নিরাপত্তারক্ষী না পাওয়া। নবান্নের খবর, বছর খানেক আগে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদমর্যাদার আইএএস অফিসারদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখনও তা করা যায়নি। ‘‘অথচ এর চেয়ে নিচু পদমর্যাদার অনেক আইপিএস দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়ান’’— মন্তব্য এক আমলার।
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, বাম আমলে আইএএস অ্যাসোসিয়েশন মাঝে-মধ্যেই শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাদের দাবিদাওয়া জানাতো। কিন্তু এই আমলে আমলাদের সংগঠনের অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। সেই অর্থে এই প্রথম তারা মুখ খুলল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy