Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪
Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: যারা কুকর্ম করে, তাদের ভালবাসি না, দুর্নীতি নিয়ে দলীয় কর্মীদের সতর্কবার্তা মমতার

পার্থ সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার আগে বুধবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি দলীয় সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২২ ০৫:৩৮
Share: Save:

শিক্ষক নিয়োগ মামলা থেকে দল ও সরকারকে কি ‘দূরে’ রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস? সিবিআই দফতরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাজিরার দিনই এই জল্পনা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গেই সরকারের দিকে আঙুল তুলে শুরু হয়েছে বিরোধীদের রাজনৈতিক তৎপরতা। দুর্নীতির অভিযোগে রাস্তায় বিক্ষোভেও নেমে পড়েছে বাম ও বিজেপি।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু সিবিআইয়ের মুখোমুখি হলেন বুধবার সন্ধ্যায়। ঘটনাচক্রে এ দিন দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি দলীয় সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যারা কুকর্ম করে, তাদের কিন্তু মানুষ চিহ্নিত করে, মানুষ তাদের ঘৃণা করে, মানুষ তাদের ভালবাসে না। আমিও তাদের ভালবাসি না।’’ পাশাপাশি, কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর হাজিরা কার্যত অনিবার্য হয়ে যায় এ দিন দুপুরেই। প্রায় একই সময়ে দু’টি বিষয় সামনে আসায় রাজনৈতিক মহলে শাসক শিবিরের অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

দলীয় সভায় এ দিন সাংগঠনিক কাজকর্মের পাশাপাশি দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, কিছু লোক আছে, সবাই নয়, এটা ০.১ শতাংশও হবে না। এটা সব জায়গাতেই আছে। হরিণ যেমন মুখটা লুকিয়ে রেখে ভাবে আমার পিছনটা আর কেউ দেখতে পারছে না, আমার শরীরটা কেউ দেখতে পারছে না, কিন্তু শরীরটা তো সবটাই বাইরে আছে, মুখটা তো শুধু ঢাকা আছে।’’

হাই কোর্টের আদেশের পরই তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত ছিল দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথাতেও। এই প্রসঙ্গে তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে জনমুখী প্রকল্প রূপায়ণ করছে। ৯৯% ভাল কাজ হচ্ছে। কোথাও কোনও ভুল হলে, চাকরি-প্রার্থীরা বঞ্চিত হলে তার দায় সরকার বা দল নেবে না।’’ সেই সঙ্গে তিনি মধ্যপ্রদেশের ব্যপম কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। একই ভাবে ত্রিপুরায় শিক্ষকদের প্যানেল বাতিল হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিঁধেছেন বামেদেরও।

বিরোধীরা অবশ্য নিশানা করেছে তৃণমূলের সরকারকেই। তাদের পাল্টা দাবি, কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে এখন ‘ব্যক্তির দায়’ বলে শাসক দল দায় এড়াতে পারে না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘এ তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র! দুর্নীতির শিকড় আরও গভীরে। আরও বড় মাথা এর সঙ্গে জড়িত।’’ তাঁর অভিযোগ, অনেক বিধায়কই পার্থবাবুকে সুপারিশের তালিকা দিয়েছিলেন। তাই দুর্নীতির বিষয়টি ‘দলগত’। আর মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া কিছুই হয় না বলে তাঁর দাবি।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘ইয়ে তো স্রেফ ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা কাশি বাকি হ্যায়। সবে তো দু’জন মন্ত্রী। এক বার টেটের ফাইল খোলা হোক, পুরো মন্ত্রিসভার নাম উঠে আসবে! পার্থবাবু সহযোগিতা করুন। সিবিআইকে বলুন, দিদিমণি কালীঘাট থেকে কাদের নাম পাঠিয়েছেন। ভাইপো কত বড় লিস্ট পাঠিয়েছেন।’’ কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারও বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দিনের পর দিন নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠে চলেছে। কে কে এর সঙ্গে জড়িত, এখন সেই সাজা ঘোষণাই বাকি রয়েছে। এক জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে তালিকার বাইরে চাকরি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কার নির্দেশে ওই দুর্নীতি হয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর উচিত, গোটা বিষয়টি খোলসা করে বলে দেওয়া।’’ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে এ দিন বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বিকাশ ভবন অভিযান ঘিরে গোলমাল বাধে বিধাননগরে।

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারের দাবিতে ‘চোর ধরো, জেলে ভরো’ স্লোগান দিয়ে এ দিনই সন্ধ্যায় মিন্টো পার্ক থেকে নিজাম প্যালেস পর্যন্ত মিছিল করতে গিয়েছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। মিছিল শুরুর পরেই পুলিশ মারধর করে তাঁদের আটক করে বলে এসএফআই নেতৃত্বের অভিযোগ। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য-সহ অনেকেই ধস্তাধস্তিতে জামা ছিঁড়ে হেনস্থার শিকার হন বলে অভিযোগ। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হল লালবাজারে। ‘নিখোঁজ’ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর সন্ধান চেয়েও নানা জায়গায় পথে নেমেছে এসএফআই। পরেশবাবুর ছবি নিয়ে মানুষকে তারা জিজ্ঞাসা করছে, কেউ তাঁকে দেখেছেন কি না? বিক্ষোভ হয়েছে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাড়ির সামনেও। রাজ্য জুড়ে আজ, বৃহস্পতিবার থানা ঘেরাও, বিক্ষোভ, মিসিং ডায়রি করা হবে জানিয়েছে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন।

এসএসসি-র দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত মন্ত্রীদের অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছে বামফ্রন্ট। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং প্রতিবাদীদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বামফ্রন্টও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল সরকারের মাথা থেকে পা পর্যন্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গিয়েছে। কখনও এই বেঞ্চ, কখনও ওই বেঞ্চ, কখনও উডবার্ন ওয়ার্ডে গিয়ে এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না! এক জন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তিনি ট্রেন থেকে নেমে উধাও হয়ে গেলেন! লজ্জাও করে না! শিক্ষামন্ত্রীরও উচিত ছিল, মন্ত্রীর কোটটা খুলে রেখে সিবিআইয়ের কাছে যাওয়া।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘কান টানলেই শুধু হবে না। কানের সঙ্গে মাথাও আসতে হবে! কাউকে ছাড়া হবে না!’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এ হল মা-মাটি-মানুষ আর চল্লিশ চোর! এরা সবাই চোর। নিয়োগ প্রশ্নে বাংলায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। প্রশ্ন হল, আমরা কি বাংলার এই ছবিকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে চাই!’’ অভিযুক্ত মন্ত্রীদের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়ানোর কৌশল ধরা পড়েছে কুণালের কথায়। সেই প্রসঙ্গে অধীরবাবুর মন্তব্য, ‘‘কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি। আগে ছিলেন দলের সম্পদ, এখন পার্থ বোঝা!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE