প্রতীকী ছবি।
অভিযোগ, নিতান্ত ভাসা ভাসা তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছিল পুলিশ। আরও বড় অভিযোগ, পুলিশের সেই গাফিলতির শিকার হয়ে ক্ষতিপূরণই হাতছাড়া হতে বসেছিল পাচারের পরে উদ্ধার করে আনা কিশোরীর। একের পর এক আইনি জট ছাড়িয়ে দীর্ঘ ন’বছর পরে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তিনি। এখন তিনি তরুণী।
মানব পাচার রোধে কর্মরত উত্তর ২৪ পরগনার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, ২০১০ সালে ওই জেলা থেকে নিখোঁজ হন রাজিয়া খাতুন (ছদ্মনাম)। তখন তাঁর বয়স পনেরো। তাঁর পরিবার বারাসত থানায় নিখোঁজ ডায়েরি এবং পরে এফআইআর করে। কিন্তু নাবালিকার খোঁজ পায়নি বারাসত থানার পুলিশ। পরের বছর মহারাষ্ট্রের ফরাসখানা থানার পুলিশ পুণের এক যৌন পল্লিতে অভিযান চালিয়ে অন্য কয়েক জনের সঙ্গে রাজিয়াকে উদ্ধার করে। তাঁকে রাখা হয় সেখানকারই একটি হোমে। পরে রাজিয়া বারাসতে ফিরে আসেন। ফরাসখানা পুলিশ রাজিয়াকে পাচার, ধর্ষণ এবং অত্যাচারের মামলা রুজু করে সেখানকার আদালতে চার্জশিট দেয়। অভিযুক্তদের ধরতে না-পেরে বারাসত থানা কিন্তু কোনও চার্জশিট দিতে পারেনি। বরং মামলা শেষ বলে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে।
ফলে ফেরত আসার সাত বছর পরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন রাজিয়ার আইনজীবী দেবায়ন সেন। ওই আইনজীবী জানান, কোনও ক্ষতিপূরণ না-পেয়ে ২০১৭ সালে তিনি রাজিয়ার হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির (ডালসা) কাছে আবেদন করেন। বারাসত থানার কাছে রাজিয়ার মামলার কাগজপত্র চেয়ে পাঠায় ডালসা। কিন্তু বারাসত থানা জানায়, ওই মামলার তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। তারা আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্টও পেশ করেছে। দেবায়নবাবু তখন পুণে থেকে রাজিয়ার মামলার কাগজ চেয়ে পাঠান। সেই নথি
পেয়ে ডালসা শুধু পাচারের জন্য রাজিয়াকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। আপত্তি তুলে রাজিয়া জানান, তিনি তো পাচারের পাশাপাশি ধর্ষণ এবং নিয়মিত অত্যাচারেরও শিকার। তাই ক্ষতিপূরণ বেশি হওয়ার কথা।
তার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌশিক গুপ্তের পরামর্শে উত্তর ২৪ পরগনার ডালসা-র নির্দেশ-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির (সালসা) কাছে আবেদন করেন দেবায়নবাবু। তিনি আবেদনে জানান, ফরাসখানা থানার পেশ করা চার্জশিটে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, রাজিয়া ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই অনুযায়ী শুনানির পরে গত ১৭ জুলাই সালসা-র মেম্বার সেক্রেটারি দুর্গা খৈতান নির্দেশ দেন, রাজিয়াকে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
দেবায়নবাবু বলেন, ‘‘ন’বছর পরে এক নির্যাতিতাকে তাঁর প্রাপ্যটুকু পাইয়ে দিতে পেরে আমি খুশি। রাজ্য সরকার অন্তত স্বীকার করে নিল যে, তারা সুরক্ষা দিতে না-পারাতেই রাজিয়া পাচার হয়। এবং সে অত্যাচার ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিল।’’ তবে শুধু ক্ষতিপূরণ আদায়েই থেমে থাকছেন না দেবায়নবাবু। রাজিয়ার মামলার নতুন তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য তিনি বারাসত সিজেএম আদালতে আবেদন করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy