Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হাল ফিরছে গির্জার, শ্রীরামপুরে ডেনমার্কের দল

শ্রীরামপুরের ঐতিহ্যপূর্ণ সেন্ট ওলাভ গির্জার সংস্কার কাজ দেখতে আজ, শনিবারই আসছে ডেনমার্কের প্রতিনিধি দল। এ বছরের শেষ দিকে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা। ২১০ বছরের প্রাচীন গির্জাটির সংস্কারের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ডেনমার্ক। প্রকল্পের সংরক্ষণ-স্থপতি মণীশ চক্রবর্তী জানান, তাঁদের দুই পদস্থ আধিকারিক বেন্টে ওলফে এবং ফ্লেমিং আলুন্দ গির্জা সংস্কারের কাজ দেখতে আসছেন।

এখন যে চেহারায়

এখন যে চেহারায়

অশোক সেনগুপ্ত
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

শ্রীরামপুরের ঐতিহ্যপূর্ণ সেন্ট ওলাভ গির্জার সংস্কার কাজ দেখতে আজ, শনিবারই আসছে ডেনমার্কের প্রতিনিধি দল। এ বছরের শেষ দিকে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা।

২১০ বছরের প্রাচীন গির্জাটির সংস্কারের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ডেনমার্ক। প্রকল্পের সংরক্ষণ-স্থপতি মণীশ চক্রবর্তী জানান, তাঁদের দুই পদস্থ আধিকারিক বেন্টে ওলফে এবং ফ্লেমিং আলুন্দ গির্জা সংস্কারের কাজ দেখতে আসছেন।

বেশ কিছু দিন ধরেই গির্জার চুড়ো পর্যন্ত বাঁশের ভাড়া বাঁধা। সামনে সংস্কার-সংরক্ষণের কথা জানিয়ে ব্যানারে টাঙানো রয়েছে। মণীশবাবু বলেন, “গির্জার ভিতরে ছাদ মেরামতির কাজ শেষ। কথা ছিল, অক্টোবরেই সংস্কারের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নানা কারণে তা হতে আরও মাস দুই লেগে যাবে।”

হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে জলা-জঙ্গল সাফ করে ১৮০০ সালে শুরু হয়েছিল এই গির্জা গড়ার কাজ। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে, ১৭৫৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ড্যানিশরা শ্রীরামপুরে থাকতে শুরু করেছিলেন। ১৭৭৬-এ শ্রীরামপুরের ‘ক্রাউন রিজেন্ট’ হিসাবে ডেনমার্ক থেকে পাঠানো হয় কর্নেল ওলাভকে।তিনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য গির্জা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। কলকাতা থেকে কোপেনহাগেন পর্যন্ত চাঁদা তোলেন। শ্রীরামপুরের মিশনারিরা টাকা দেন। হাজার টাকা দিয়েছিলেন মার্কুইস অব ওয়েলিংটন।

প্রস্তাবিত চেহারা

১৮০০ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। খরচ হয় প্রায় ১৮৫০০ টাকা। ইতিমধ্যে সেখানে তৈরি হয়েছে শ্রীরামপুরে ড্যানিশ প্রধানের ভবন। সেখান থেকে দিনরাত গির্জার কাজ দেখাশোনা করতেন ওলাভ। নির্মাণ শেষ হতে সময় লেগেছিল বছর পাঁচেক। শোনা যায়, ১৮০৫ সালে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে তিনি ওই গির্জার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “ওটা শেষ হয়ে এল।” গোড়ায় গির্জাটির নাম ছিল ‘লুথেরান চার্চ’। পরে ওলাভের স্মৃতিতে নামকরণ করা হয়। সেখানে প্রার্থনা শুরু করান উইলিয়াম কেরি। তিনি ছাড়াও আরও দুই পথিকৃত জন মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডের ছবি আজও ঝুলছে গির্জার দেওয়ালে। ইতিহাসের পটবদলে পরে শ্রীরামপুরে ড্যানিশদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে ব্রিটিশরা। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পরে ১৮৪৫ সালে ড্যানিশরা বিদায় নেয়। গির্জার দায়িত্ব বর্তায় বিশপ অব কলকাতার হাতে। এক সময়ে রাজপুরুষদের সম্মান জানাতে সেখানে তোপ দাগা হত। ঔপনিবেশিক আমল শেষে সেই কামানগুলো পড়ে ছিল। ১৯৪০ সালে গির্জার সামনে একটি বাগান তৈরি করে এমন কিছু কামান সংরক্ষিত করা হয়। সেই বাগানটিও এখন বেহাল। গির্জাটিকে পর্যটক-বান্ধব করে তুলতে ক’বছর আগে ঠিক হয়েছিল, সেটির সামনের অংশ সাফসুরত করা হবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। এখন গির্জার চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা থাকে বেসরকারি বেশ কিছু বাস। সরকারি জমি দখল করে তৈরি হয়েছে দোকান। শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচ আর বি সি) ২৮ কাঠা জমি নিয়ে একটি বাস টার্মিনাস তৈরি করাচ্ছে। তার বাজেট প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। বছর দুই লাগার কথা। মাস ছয় আগে শুরু হয়েছে কাজ। সেটি তৈরি হয়ে গেলে ওখানে আর বাস দাঁড়াবে না।” দোকানের দখল কে তুলবে, তার জবাব অবশ্য কোথাও মেলেনি। তবু এ সবের মধ্যে দুই শতাব্দী আগের সৌধ পূর্ণ গরিমায় মাথা তুলে দাঁড়াবে, আশা এটুকুই।

অন্য বিষয়গুলি:

srirampur church
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE