বিষ মেশানো রসগোল্লা খাইয়ে ছয় বছরের সৎ মেয়েকে খুনের দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল আদালত। পাণ্ডুয়ার জামনা পঞ্চায়েতের ঘুসালদিঘির বিশু সোরেনকে শুক্রবার এই সাজা শোনান চুঁচুড়া আদালতের বিশেষ বিচারক পুলক তেওয়ারি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘুসালদিঘি গ্রামের বাসিন্দা কালোমনি সোরেন প্রথম পক্ষের স্বামী মারা যাওয়ার পরে ২০০১ সালের শেষ দিকে বিশুকে বিয়ে করেন। কালোমনির আগের পক্ষের একটি মেয়ে ছিল। শেফালি নামের শিশুকন্যাটিকে বিশু মেনে নিতে পারেনি। একরত্তি শিশুটিকে নিয়ে স্ত্রীর উপরে চোটপাট করত সে। হুমকি দিত, কালোমনি মেয়েকে মেরে ফেলুক। না হলে সে তাকে খুন করবে। কালোমনি রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করতেন। ২০০২ সালের ৬ মার্চ সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। তখন শেফালি, কালোমনির কিশোর ভাই বাপি মুর্মু এবং বিশু বাড়িতে ছিল। দুপুরে কাজ থেকে ফিরে কালোমনি দেখেন, শেফালি এবং বাপি বিছানায় ছটফট করছে। দু’জনেরই মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। কালোমনি জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, বিশু তাদের দু’জনকে দু’টি রসগোল্লা খাইয়েছে। তার পরেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন বিশু বাড়িতেই ছিল। কিন্তু তার মধ্যে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। কালোমনি পড়শিদের বিষয়টি জানান।
পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শেফালির মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে বেগতিক বুঝে বিশু সোরেন পালানোর চেষ্টা করলে গ্রামবাসীরা তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করে। পড়শিদের কাছে বিশু স্বীকার করে, রসগোল্লার সঙ্গে বিষ মিশিয়ে সে শেফালি এবং বাপিয়ে খাইয়েছিল। এর পরে কালোমনি স্বামীর বিরুদ্ধে পাণ্ডুয়া থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিশুকে গ্রেফতার করা হয়। মৃত শিশুকন্যার দেহের ময়না-তদন্তে বিষক্রিয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হয়। কিছু দিন জেল খাটার পরে সে জামিনে মুক্তি পায়। বাপি চিকিৎসায় সেরে ওঠে। সরকার পক্ষের আইনজীবী কালীপ্রসাদ সিংহরায় এবং মৌমিতা ঘোষ জানান, শুনানিতে বাপি-সহ মোট ১৭ জন বিশুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। বৃহস্পতিবার বিচারক বিশুকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাস জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
রায়ের পরে। টুঁচুড়া আদালতে তাপস ঘোষের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy