দুগার্পুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে এভাবেই লরি, ট্রাক দাঁড় করিয়ে মালখালাস চলে। ছবি: দীপঙ্কর দে।
নিরাপদে, দ্রত গন্তব্যে পৌঁছতে ঝাঁ-চকচকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের জন্য মোটা টাকা টোল ট্যাক্স মেটাতে হয় যাত্রীসাধারণকে। অথচ রাজ্যের অন্যতম সেরা এই জাতীয় সড়ক ক্রমশই যানচালকদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে।
এক্সপ্রেসওয়ের ধারে নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের। রয়েছে অ্যাপ্রোচ রোড। এ ছাড়াও ৩০ কিলোমিটার অন্তর লে-বাই (গাড়ি যেখানে দাঁড়ায়) রয়েছে নিয়মমাফিক। সেখানে স্নান, শৌচাগারের সুযোগ রয়েছে চালকদের। ডানকুনির কাছে কাপাসহাড়িয়া এলাকতেই রয়েছে লে-বাই। অথচ এই এলাকা এবং এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন আশপাশের বহু জায়গায় সবচেয়ে বেশি গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। নিয়মমাফিক রাস্তার ধারে দিক নির্দেশের বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। কিন্তু পথ নিরাপত্তার এই আধুনিক ব্যবস্থার কেউ তোয়াক্কা করেন না। সে গাড়ির মালিকই হন বা গাড়ির চালক। যার খেসারত দিতে পথে বের হয়ে প্রতিদিন মানুষকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হওয়া তো দূরঅস্ত, বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে এই সব উপদ্রব।?
প্রশাসনের ভূমিকা?
পুলিশের নাকের ডগায় রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ তারা নির্বিকার। আর পুলিশের এ হেন নিস্ক্রিয়তাই প্রায় সময়ই বিপদ ডেকে আনছে। পুলিশের কিছু না করার মনোভাবে প্রশ্রয় পেয়ে বহু সময় স্রেফ মালপত্র নামানোর জন্য চালকেরা বেআইনি ভাবে এক্সপ্রেসওয়েক দু’ধারেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখছে। পাশাপাশি অনেক সময় আবার চালকেরা পথক্লান্তি দূর করতে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ধাবায় বিশ্রাম নিতে চলে যান। কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার ফাঁকে তাঁদের রাস্তার ধারে রেখে যাওয়া গাড়ি বিপদ ডেকে আনে পথচলতি অন্য যানবাহনের।
এর পাশাপাশি অনেক সময় কলকাতায় মাল বোঝাই গাড়ি ঢোকার সময়ের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। সেই জন্যই কলকাতামুখী ভিন রাজ্য থেকে আসা মালপত্র বোঝাই গাড়িগুলি রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে দেন চালকেরা। হাইওয়ে ট্রাফিক বা জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানাগুলির নজর এড়িয়ে দিব্যি রাস্তার উপর সেই সব ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। আর এইসব অসর্তকভাবে দাঁড়িয়ে পড়া গাড়িগুলিই মৃত্যুফাঁদ হয়ে অন্য গাড়ির বিপদ ডেকে আনে।
মূলত সন্ধের পর থেকে রাতভর হুগলির আরামবাগ, বর্ধমান এবং বীরভূমের দিক থেকে বালি বোঝাই ট্রাক এসে দাঁড়ায় ডানকুনিতে। পাশপাশি কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে নির্মাণকাজে স্টোন চিপসের জোগান দিতে ঝাড়খন্ডের পাকুড়, বীরভূমের নলহাটি, মহম্মদবাজার থেকে আসে পাথরবোঝাই ট্রাক। তবে রাত ১০টার আগে ওই সব বালি, পাথর বোঝাই লরি বা ট্রাক কলকাতা শহরে ঢোকার অনুমতি নেই। ফলে সেগুলি ডানকুনি ছাড়াও দুর্গাপুর এক্লপ্রেসওয়ের পাশাপাশি অহল্যাবাই রোড, দিল্লি রোডের ধারে রেখে দেওয়া হয়। বহু সময় এটাও দেখা যায় ওই সব ট্রাকের অনেকেই আদৌ কলকাতায় ঢোকে না। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা স্রেফ মাল খালাস করার জন্য গাড়িগুলি রাস্তার ধারে রেখে দেন। কয়লা, সিমেন্ট থেকে ছোট গাড়ি সবই খালাস চলে ওই সব ট্রাক থেকে। মাল খালাসের জন্য সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত কুলির ভিড় লেগে থাকে। বলাবহুল্য সবই চলে পুলিশের চোখের সামনে।
ডানকুনি ছাড়িয়ে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানের দিকে এগেলোই দেখা যায় রাস্তার ধারে একাধিক লরি, ট্রাক, ট্রেলারের সারি। ডানকুনি থেকে ঘনশ্যামপুর, গোপালনগর, সিঙ্গুর, মহেশ্বরপুর, দাদপুর, গুড়াপ, জামালপুর, মশাগ্রাম, পালসিট সর্বত্রই একই ছবি। ইদানীং আবার দেখা যাচ্ছে ছোট চার চাকার ঠেলা গাড়িতে উনুন লাগিয়ে চা এবং খাবারের পসরা নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে বসে পড়ছেন বিক্রেতারা। তার উপর অনেকে আবার খদ্দের টানতে রীতিমত রঙিন আলো লাগিয়ে দেন। যা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গাড়ি পার্কিংয়ের মতোই বেআইনি।
হাইওয়ে বিশেষজ্ঞ এক সরকারি কর্তা জানান, এক্সপ্রসওয়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। তাই এ সব একেবারেই বেআইনি। এমনকী এক্সপ্রেসওয়ের মাঝে ডিভাইডারে যে সব গাছ লাগানো হয় তারও নির্দিষ্ট উপযোগীতা থাকে। তা হল যাতে এক লেনের গাড়ির আলো অন্য লেনের গাড়ির চালকের চোখে না লাগে। কারণ তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রবল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সে সব নিয়মের কোনও তোয়াক্কাই কেউ করছেন না। তাঁর মতে, পুলিশ-প্রশাসনকে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। না হলে নিয়ম না মানার খেসারত দিতে দুর্ঘটনা ঘটকেই থাকবে।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy