তেরো দিন কাজ বন্ধ থাকার পরে আজ, মঙ্গলবার থেকে উৎপাদন চালু হচ্ছে রিষড়ার হেস্টিংস চটকলে।
সোমবার কলকাতার নব মহাকরণে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে ওই মিলে তৈরি হওয়া জটিলতা আপাতত কাটল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, দু’টি নয়, সপ্তাহে ৬ দিন তিনটি শিফটে কাজ হবে।
বৈঠকের এই সিদ্ধান্তে চটকলের সাড়ে চার হাজার শ্রমিকের সঙ্কট কাটল। কাজ বন্ধ থাকায় তাঁরা বিপাকে পড়েছিলেন। এ দিনই সন্ধ্যায় উৎপাদন চালুর বিষয়টি মিলের গেটের সামনে সভা করে জানিয়ে দেয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। এ দিন নব মহাকরণের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত পরে বলেন, “মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে কাজ চালু হবে। চটকলে যাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে সে ব্যাপারে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নজর রাখতে হবে। ১৫ দিন পরে ফের মিলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বৈঠক হবে।”
তিনটি শিফটের বদলে দু’টি শিফটে কাজ করানো হবে, কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে গত ৫ নভেম্বর অশান্ত হয় ওই চটকল। কাজ হারানোর আশঙ্কায় শ্রমিকদের একাংশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মিলে ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে শ্রমিকদের হাতে মার খেয়ে জখম হন রিষড়া থানার তিন পুলিশকর্মী। পরে জেলা পুলিশের কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয় মিলে ভাঙচুর এবং কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগে। ওই ঘটনার পরেই মিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকেরা মিলে যাচ্ছিলেন না। কর্তৃপক্ষও উচ্চবাচ্য করছিলেন না।
সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনার অমল মজুমদারের দফতরে প্রথমে দ্বিপাক্ষিক এবং পরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। তবে, গত বুধবার ওই দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক থাকলেও মালিকপক্ষ উপস্থিত হননি। চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার অভাবের কথা জানিয়ে তাঁরা অন্য কোথাও বৈঠক ডাকতে বলেন। তার পরেই সোমবার কলকাতায় বৈঠক হল। সেখানে চটকলের মালিক সঞ্জয় কাজোরিয়া এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং তপনবাবু। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের যুগ্ম শ্রম কমিশনার শর্মিলা খাটুয়া এবং শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনারও।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ৫ নভেম্বরের গোলমালে অভিযুক্তদের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন চটকল কর্তৃপক্ষ। এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি-র হুগলি জেলা সভাপতি পরিমল সেন বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম সপ্তাহে ছ’দিন তিনটি করে শিফটে কাজ হোক। মালিকপক্ষ সেই দাবি মানতে বাধ্য হয়েছেন।”
এ দিকে, এ দিন শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতেও কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয় মলয়বাবু-তপনবাবুর উপস্থিতিতে। কর্তৃপক্ষ পাঁচ জনকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওই চটকলেও শ্রমিক অসন্তোষ হয়। রাজ্য শ্রম দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে কর্তৃপক্ষ ওই পাঁচ জনকে কাজে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হন। তবে, এর পরে তাঁরা ফের গোলমালে জড়ালে সরকার পক্ষ বা শ্রমিক সংগঠন মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তে কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না বলে আলোচনায় স্থির হয়েছে। তপনবাবু জানান, ওই মিলেও সমস্যাও মিটে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy