হতাশ: এক সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে হাসিনা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
মাতৃযান নিয়ে সমস্যা কাটছে না পুরশুড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এ বার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই অ্যাম্বুল্যান্স সময়ে না-পৌঁছনোয় এক প্রসূতির যমজ সন্তানের মধ্যে একটির মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। যার জেরে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা শুক্রবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভও দেখালেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
এ দিন সকালে বড়দিগরুই গ্রামের মাঝপাড়ার হাসিনা বেগম বাড়িতেই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। যমজ সন্তানের অন্যটি প্রসব না-হওয়ায় হাসিনা কষ্ট পাচ্ছিলেন। তা দেখে আশাকর্মী সোমা মুখোপাধ্যায় মাতৃযানের জন্য ফোন করেন। সেই মাতৃযান থেকে তাঁকে ২০-২৫ মিনিট দেরি হওয়ার কথা জানানো হয় বলে সোমাদেবীর দাবি। অন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে হাসিনাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে আরও আধ ঘণ্টা দেরি হয়। সাড়ে ৯টার পরেদ ওই প্রসূতিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ‘লেবার রুম’-এ নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মৃত কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক সহেলি সাঁতরা বলেন, “এমনিতেই যমজ বাচ্চার স্বাভাবিক প্রসব খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে একজনের প্রসব হয়। এখানে প্রসূতিকে আনার পর থেকে তাঁর গর্ভে থাকা শিশুর হৃদস্পন্দন ছিল না। হয়তো সময়ে আনা হলে শিশুটিকে বাঁচানো যেত।” হাসিনার স্বামী শেখ মফিজুল বলেন, “কোনও অভিযোগ জানাচ্ছি না। স্থানীয় মানুষকে বিক্ষোভ দেখাতে বারণ করি। মুখ্যমন্ত্রী ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে বিশেষ যত্নবান বলে শুনেছি। আমাদের মেয়ে হারানোর বিষয়টা মাথায় রেখে মাতৃযান পরিষেবা যাতে যথাযথ হয়, খালি সেই দাবি করছি। আমাদের যে বিপদ হল তা যেন আর কারও না হয়।”
দীর্ঘদিন ধরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যে অ্যাম্বুল্যান্সে ‘মাতৃযান’ পরিষেবা মিলছিল, সেটি বেশ কিছুদিন হল বিকল। গত সোমবার ভোরে ওই পরিষেবা না-পেয়ে মোটরবাইকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পথে প্রসব করে ফেলেন এক প্রসূতি। সদ্যোজাতটি মাটিতে পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। প্রসবের সময় গুরুতর জখম হন প্রসূতি। সে দিনই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফটকে অন্য এক গাড়িতে প্রসব করে ফেলেছিলেন আর এক প্রসূতিও। আনন্দবাজারে এ খবর প্রকাশিত হতেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর বুধবার থেকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি মাতৃযানের ব্যবস্থা করে। তবু সমস্যা মিটল না।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত বাগ বলেন, “অন্য প্রসূতিকে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যই মাঝপাড়ায় সময়ে পৌঁছতে পারেনি মাতৃযান। ঘটনার তদন্ত হবে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট করতে বলেছি। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতির চাপ মোতাবেক একটি গাড়িই দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সপ্তাহখানেকের মধ্যে আরও একটি গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে।”
ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, হাসিনার এটা দ্বিতীয়বার প্রসব। প্রসবের নির্ধারিত সময় ছিল ডিসেম্বর মাস। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর কোমরে যন্ত্রণা শুরু হয়। আশাকর্মী সোমাদেবী তাঁর বাড়ি গিয়ে খোঁজও নেন। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ খবর পান, হাসিনার প্রসব যন্ত্রণা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মাতৃযানে ফোন করেন। তাঁকে দেরি এবং তার কারণের কথা জানানো হয়। সকাল ৮ট নাগাদ সোমাদেবী হাসিনার বাড়ি গিয়ে দেখেন, তিনি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেছেন। সোমাদেবীর কথায়, ‘‘অন্য সন্তান প্রসব না-হওয়ায় হাসিনা কষ্ট পাচ্ছিলেন। ওঁদের বাড়ির লোক তখন অন্য একটি গাড়ির চালককে খবর দেন। সেই গাড়িটি আসতেও দেরি করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy