Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Municipal Election 2020

খেলার মাঠ আর রবীন্দ্রভবন নষ্ট হচ্ছে, ক্ষোভ

সামনেই পুরভোট। নাগরিক সমস্যা প্রায় সর্বত্রই। কোথাও নল দিয়ে জল পড়ে না। কোথাও ফুটপাত বেহাল। কোথাও নিকাশি সমস্যায় মানুষ জেরবার। রয়েছে দূষণও। পুর এলাকাগুলিতে এমন সমস্যার দিকে নজর আনন্দবাজারের। আজ মাঠ ও সংস্কৃতিকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ।সামনেই পুরভোট। নাগরিক সমস্যা প্রায় সর্বত্রই। কোথাও নল দিয়ে জল পড়ে না। কোথাও ফুটপাত বেহাল। কোথাও নিকাশি সমস্যায় মানুষ জেরবার। রয়েছে দূষণও। পুর এলাকাগুলিতে এমন সমস্যার দিকে নজর আনন্দবাজারের। আজ মাঠ ও সংস্কৃতিকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ।

সংস্কারের পরও এমনই হাল খেলার মাঠের। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

সংস্কারের পরও এমনই হাল খেলার মাঠের। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

মাঠ আছে, রক্ষণাবেক্ষণ নেই। খেলাধূলার চর্চাও নেই।

প্রেক্ষাগৃহ আছে, তারও ভগ্নদশা। সেখানে সংস্কৃতি চর্চা এখন অতীত। বদলে চলছে চটুল গান-নাচ আর রাজনৈতিক সভা-সমিতি।

আরামবাগ পুরসভা এলাকায় খেলা এবং সংস্কৃতি চর্চার এই হাল নিয়ে বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষর দিকে আঙুল তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আরামবাগ পুরসভা এলাকার ১৯ টি ওয়ার্ডে স্কুল এবং বিভিন্ন ক্লাব মিলিয়ে মোট ৯টি খেলার মাঠ। অধিকাংশ স্কুল কিংবা কোনও ক্লাবের। বড় মাঠ বলতে জুবিলি পার্ক মাঠ, পারুল, বসন্তপুর, বয়েজ স্কুল মাঠ এবং কালীপুরে বিজয় ক্রীড়াঙ্গন। কিন্তু অধিকাংশ মাঠগুলি তদারকি এবং যথাযথ সংস্কারের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। সম্প্রতি গ্রিন সিটি প্রকল্পে আরামবাগ বয়েজ স্কুলের মাঠ-সহ কয়েকটি মাঠ বিশেষজ্ঞ ছাড়াই কিছু মাটি ও বালি ফেলে নামমাত্র সংস্কার করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

৬ নম্বর ওয়ার্ড ব্লক পাড়ার এক ক্রীড়াপ্রেমী বিমল দাসের অভিযোগ, “মাঠ সংস্কারের ক্ষেত্রে মাঠ চষার পর তাতে ভাল মাটি এবং বালি মেশানোর কথা। জল যাতে না জমে মাঠ হবে কাছিমের পিঠের মত। মাঠের ধারে আন্ডার গ্রাউন্ড জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে মাঠ প্রয়োজনে ভেজানো যায়। কোনও মাঠেই এ সব কিছুই হয়নি। সরকারি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।”

শহরে খেলাধূলার চর্চা তলানিতে ঠেকেছে বলেই মনে করেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রৌঢ় গণেশ অধিকারী। প্রাক্তন এই ফুটবলারের আক্ষেপ, “৪০ এর দশক থেকে শুরু করে আরামবাগে ফুটবল, ভলিবল ইত্যাদি খেলার জোয়ার ছিল টানা ৭০ দশক পর্যন্ত। তখন ফুটবলে আরামবাগের অনেকেই কলকাতার বড় দলগুলিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এখন মাঠে ছেলেদের পাওয়া যায় না। খেলোয়াড় তৈরিরও কোনও উদ্যোগও নেই। অনেক টাকা খরচ করে মাঠ সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সেগুলো টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। ওগুলো মেলা আর সভার মাঠ হয়েছে। খেলার মাঠ নয়।’’

ফুটবল খেলোয়াড় এবং এনআইএস কোচ হুমায়ুন খানের অভিযোগ, “একদিকে মাঠগুলো পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে, খেলোয়াড় তৈরির জন্য কোচিং নেই। আগে যুব কল্যাণ দফতরের তহবিল থেকে কোচিংয়ের যে ব্যবস্থা ছিল, এখন তা-ও নেই।

সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রেও একই ছবি আরামবাগ শহরে। সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাসে শহরে নাটক ছিল এক নম্বরে। ৮০-র দশক পর্যন্ত নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ হত। দ্বিতীয় স্থানে ছিল আবৃত্তি। এখন বছরে এক-দু’বার নাটক মঞ্চস্থ হয়। হাস্যকৌতুক প্রায় উঠেই গেছে। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল। এখন আর তা নেই। আরামবাগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিমল চক্রবর্তীর অভিযোগ, “শহরে সংস্কৃতির হাল খারাপ। খালি নাচ-গান করে জন্মদিন পালন হচ্ছে। নাটক-কবিতা আবৃত্তির মত অনুষ্ঠানগুলি হয় না বললেই চলে। শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ নষ্ট হতে বসেছে। সেখানে রাজনৈতিক কর্মিসভা হয়।’’

রবীন্দ্রভবনের ভগ্নদশা নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ শহরজুড়ে। ভিতরে আসন ভাঙা। সাড়ে ৮০০ আসনের ওই প্রেক্ষগৃহে ৫০০র বেশি লোক হলেই বাইরে থেকে চেয়ার এনে পাততে হয়। ছাদ থেকে জল পড়ে। ১২টি বাতানুকূল যন্ত্রের ৮টি খারাপ। পানীয় জলের ব্যবস্থা অকেজো। বাইরের চত্বরে খান ২০ আলো ভেঙে গিয়েছে।

আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “মাঠগুলি যথাযথ সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খেলাধূলার উন্নয়ন করতে শহরের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের নিয়ে কমিটি করা হবে। একটি ইন্ডোর স্টেডিয়ামেরও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুরমন্ত্রীর কাছে। রবীন্দ্রভবন আমূল সংস্কারের জন্য টাকা চেয়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Municipal Election 2020 Arambag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE