Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

যায় যদি যাক প্রাণ, মদের দোকান খুলতেই হামলে পড়ল ভিড়

ভিড় টানার ‘প্রতিযোগিতা’য় রেশন দোকানকে গো-হারা হারিয়ে দিল মদের দোকান।

চণ্ডীতলার জনাইতে একটি মদের দোকানের সামনে লাইন। ছবি: দীপঙ্কর দে

চণ্ডীতলার জনাইতে একটি মদের দোকানের সামনে লাইন। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০৬:১৩
Share: Save:

এক মাসেরও ওপর বন্ধ শাটার অবশেষে খুলেছে। আর পায় কে!

ভিড় টানার ‘প্রতিযোগিতা’য় রেশন দোকানকে গো-হারা হারিয়ে দিল মদের দোকান। দুই জেলাতেই। সোমবার সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে পড়ল পুলিশের। হাসি চওড়া হল ক্রেতার।

মদের দোকান খোলা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই। মাঝে মদের ‘হোম ডেলিভারি’র গুজবও ডানা মেলেছিল। সুরারসিকরা আশায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিঁড়ে ভেজেনি। কেউ কেউ অবশ্য তিন গুণ বেশি দামে লুকিয়ে-চুরিয়ে মদ কিনে এতদিন চালাচ্ছিলেন।

কিন্তু সরকারি ছাড়পত্র মেলায় সোমবার ছবিটা বদলে গেল। বেলা ১২টায় দোকানে এসেই জনাইয়ের মদ ব্যবসায়ী সমর সাহার চোখ কপালে! দু’দিকে প্রায় আধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাইন! সেই ভিড়ে মিশে রয়েছেন আশপাশের এলাকা ছাড়াও উত্তরপাড়া, ডানকুনি, মশাট, শিয়াখালার বাসিন্দারাও! ভয়ে তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে দেন সমর।

ওই মদ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছি‌ল, লুট হয়ে যাবে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দোকান বন্ধ করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।’’ গোটা দৃশ্যটি দেখে বেশ মজাই পেয়েছেন স্থানীয় এক মহিলা। তিনি বলেন, ‘‘বিশাল লাইন দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিলি হবে। পরে মদের দোকান খুলতে ভিড়ের কারণ বুঝলাম। পুলিশ হিমশিম খাচ্ছিল। আচমকা দোকানটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মুখ-চোখ পুরো ফ্যাকাসে হয়ে গেল।’’

শ্রীরামপুরে দিল্লি রোডের ধারের একটি পানশালার সামনের কাউন্টারকে ঘিরে এ দিন রীতিমতো মেলা বসে যায়। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই ছিল না। বৈদ্যবাটীতেও দিল্লি রোডের ধারে একটি দোকানের সামনে লম্বা লাইন ছিল। অনেকে জানান, আবার যদি কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তাই বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছেন। কিছু জায়গায় মদের দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর গোল দাগ কেটে দেওয়া হয়। যাতে ক্রেতারা দূরত্ব-বিধি মেনে লাইনে দাঁড়ান। কোথাও আবার রেশন দোকানের কায়দায় ইট, জুতো, ব্যাগ রেখে ধৈর্য ধরে লাইন দিয়েছেন সুরারসিকেরা। মদ কম মজুত থাকায় ভিড়ের ভয়ে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাটের অনেক ব্যবসায়ী আবার দোকানই খোলেননি। হাওড়ার ধুলাগড়ি ট্রাক টার্মিনাসে পর পর তিনটি মদের দোকান আছে। সেখানে কয়েকশো মানুষ সকাল থেকে লাইন দেন।

মদের বোতল দেদার বিকিয়েছে। কিন্তু কোনও ক্রেতাই দু’টির বেশি কিনে ফিরতে পারেননি। কারণ, আবগারি দফতর মদ ব্যবসায়ীদের এক জন ক্রেতাকে দু’টির বেশি বোতল দিতে নিষেধ করেছে। মদের দোকানগুলিতে এই ভিড়, এই হামলে পড়া দেখে কেউ কেউ করোনা সংক্রমণের কথা ফের তুলেছেন। কেউ সরকারি উদ্যোগের নিন্দাও করেছেন। আবার উল্টো মতও শোনা গিয়েছে। তা হল, লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে মদ বিক্রি হলে কালোবাজারির প্রবণতা কমবে। সরকারের আয় হবে। সর্বোপরি, আসক্তেরা বিষমদ বা চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকবেন না।

আরামবাগের তিরোল গ্রামের প্রদীপ্ত চক্রবর্তী মদের দোকান খোলার খবরে খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন বেশি দাম দিয়ে লুকিয়ে কিনতে হচ্ছিল। এ বার নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।’’ পান্ডুয়ার তেতের পাড় এলাকার গোপাল পালের কথায়, ‘‘এত দি‌ন এখান-সেখান থেকে মদ কিনতে হচ্ছিল। চারশো টাকার বোতল হাজার টাকায় কিনেছি। আর দুশ্চিন্তা নেই।’’ হুগলির গণ্ডিবদ্ধ ১৩টি পুর এলাকা এবং ১১টি পঞ্চায়েত এলাকায় মদ ব্যবয়াসীরা অবশ্য দোকান খোলার অনুমতি পাননি। এ সব এলাকার সুরারসিকদের শুকনো মুখেই দিন কাটাতে হয়েছে। ফেলতে হয়েছে দীর্ঘশ্বাস।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy