Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রাস্তার হাল ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি গ্রামবাসীর

রাস্তার দৈর্ঘ্য মেরেকেটে ২ কিলোমিটার। বর্ষায় সেটি পুকুরের চেহারা নেয়। বছরের অন্য সময় মেঠোপথের মতো ধুলো ওড়ে।

ভাঙাচোরা পথ দিয়েই চলছে যাতায়াত। ছবি: প্রকাশ পাল।

ভাঙাচোরা পথ দিয়েই চলছে যাতায়াত। ছবি: প্রকাশ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
Share: Save:

রাস্তার দৈর্ঘ্য মেরেকেটে ২ কিলোমিটার। বর্ষায় সেটি পুকুরের চেহারা নেয়। বছরের অন্য সময় মেঠোপথের মতো ধুলো ওড়ে।

শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের দিল্লি রোড সংলগ্ন এই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে প্রশাসনের নানা মহলে ঘুরে জুতো ক্ষয়ে গিয়েছে গ্রামবাসীদের। একের পর এক চিঠিচাপাঠি থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, অবরোধ সব কিছুই হয়েছে এই ‘কঙ্কালসার’ রাস্তার জন্য। তবুও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি তার। শেষ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু নবান্নের শীর্ষমহল থেকে এখনও অবশ্য কোনও উত্তর তাঁদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

দিল্লি রোড লাগোয়া রাস্তাটি রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েত ভবনের সামনে দিয়ে সিমলা হয়ে বিবিরবেড় পর্যন্ত গিয়েছে। এই রাস্তার উপরে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। বিবিরবেড় হয়ে এক দিকে রিষড়া, অন্য দিকে শ্রীরামপুর পুরএলাকায় যাওয়া যায়। ট্রেন ধরতে বা অন্য কোনও প্রয়োজনে প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ ওই দুই শহরে যান। আশপাশের গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে শ্রীরামপুরের বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করে। সকলেই এই রাস্তার উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বাস না চললেও এই রাস্তায় অটো-টোটো চল‌ে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই ওই সব গাড়িতে চলাচল করেন গ্রামবাসীরা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বারো-তেরো বছর আগে রাস্তাটি তৈরি হয়। পরে দু’-এক বার তাপ্পি দেওয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। রিষড়ায় ছোটবড় বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। সেই সব কারখানার ভারী ভারী ট্রাক এই রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করে। সব মিলিয়ে কয়েকশো ট্রাকের ধকল প্রতিদি‌ন এই রাস্তাকে সহ্য করতে হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মালবাহী ওই সব ট্রাক, ডাম্পার, ট্রেলারের ভার সইতে না পেরে রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, বিডিও, এসডিও, মহকুমাশাসকের দফতর— কোনও জায়গাতেই আবেদন-নিবেদন করতে বাদ রাখেন‌নি তাঁরা। বিধায়ক, সাংসদের কানেও বিষয়টি তোলা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।

গ্রামবাসীদের আন্দোলনের জেরে বছর দুই-তিন আগে জেলা প্রশাসনের তরফে ইঞ্জিনিয়ররা এসে মাপজোক করে গিয়েছিলেন। ওই পর্যন্তই। অন্য উপায় না পেয়ে কিছু দিন আগে কার্তিক মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। চিঠি পাঠানো হয় সাংসদ কল্যাণবাবুকেও। কার্তিকবাবুর আক্ষেপ, ‘‘পাশের রিষড়া ও শ্রীরামপুর পুরসভায় রাস্তায় পিচের আস্তরণ পড়তে দেরি হচ্ছে না। অথচ আমরা কেন বঞ্চিত? বর্ষায় বড় বড় গর্ত থেকে ছিটকে আসা জলকাদা আর অন্য সময়ে ধুলোবালি গায়ে মেখেই চলতে হয় আমাদের। প্রতিমুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। রাতে তো সাইকেল, মোটরবাইক চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ে।’’ যদিও পঞ্চায়েত প্রধান বিষ্ণু মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা তো চেষ্টা করছি। বুধবারও জেলা পরিষদে গিয়ে রাস্তাটির ব্যাপারে তদ্বির করেছি।’’

প্রশাসনের একটি সূত্রের বক্তব্য, রাস্তাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করতে ১০ কোটি টাকা লাগবে বলে হিসেব করা হয়েছিল। যেহেতু বিভিন্ন কারখানার ভারী ট্রাক ওই রাস্তায় চলাচল করে, তাই তাদেরও টাকা দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। রাস্তা সংস্কার নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে একাধিক বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ দানা বাঁধেনি। ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য টুম্পা মেটে বলেন, ‘‘এত টাকা জেলা পরিষদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় কারখানাগুলিও খুব একটা এগিয়ে আসেনি। অথচ ভারী ট্রাকের জন্যই রাস্তার এত খারাপ অবস্থা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সম্প্রতি সাংসদ কল্যাণবাবু বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে কথা বলেছেন।’’

আশ্বাস কবে বাস্তবায়িত হবে সে দিকেই তাকিয়ে গ্রামবাসীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bad condition Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE