পাতপেড়ে: আমপানের পরে বাড়ি ফেরা হয়নি। স্কুলেই ঠাঁই নুর কালামের পরিবারের। নিজস্ব চিত্র
একে একে সকলেই বাড়ি ফিরলেন। নুর কালামেরই ফেরা হল না। আমপানের পরে তিন-তিনটি মাস কেটে গেল। না পেয়েছেন ক্ষতিপূরণ, না ত্রিপল। মাটির বাড়িটা আর নেই। এখনও তাই এলাকার শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে স্ত্রী আসুরা বেগম এবং ছোট ছোট চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে মাথা গুঁজে রয়েছেন পাঁচলার জলা বিশ্বনাথপুর পঞ্চায়েতের রাজখোলা কলোনি বাঁধের বাসিন্দা নুর।
রোজগার নেই। ১০০ দিনের কাজ পাননি। চোখের সমস্যার জন্য দিনমজুরের কাজ করতে পারেন না। রেশনের চাল-গম আর প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে নুর যা পান, তা দিয়েই চলছে ছ’টা পেট। সর্বক্ষণ দুশ্চিন্তা, ‘‘এখানে পড়াশোনা শুরু হয়ে গেলে স্কুল ছাড়তে হবে। তখন যাব কোথায়? আবেদন করে এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পেলাম না। পঞ্চায়েত এখনই স্কুল ছাড়তে বলছে।’’ নুরের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বিশ্বনাথপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের যে তৃতীয় তালিকা হয়েছে তার জন্য নুর কালামের নাম পাঠানো হয়েছে। তাঁর ক্ষতিপূরণের জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ নুরকে স্কুল ছাড়তে বলার কথা অস্বীকার করে প্রধানের দাবি, ‘‘এই বিপদে ওঁকে স্কুল ছেড়ে যেতে বলব, এতটা অমানবিক আমরা নই।’’ নুর একসময়ে জরির কাজ করতেন। চোখের সমস্যা হওয়ায় বছর দুই হল তিনি মুম্বইয়ের মালাডে একটি হোটেলে কাজ করছিলেন। লকডাউনের ঠিক আগে ফিরে এসে আটকে পড়েন। ২০ মে আমপানে তাঁর মাটির দু’কামরা বাড়ি ধূলিসাৎ হয়। আরও অনেকের সঙ্গে তাঁরা সপরিবারে ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে আশ্রয় নেন।
আসুরার খেদ, ‘‘পরে সবাই চলে গেলেন। কেউ ক্ষতিপূরণের টাকায় বাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন। কারও বাড়ির হয়তো তেমন ক্ষতি হয়নি। আমাদের নিজেদের বাড়ি নেই। ক্ষতিপূরণও পাইনি। আমরা তাই থেকে গিয়েছি।’’
দু’দিন আগে পর্যন্ত শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে সপরিবারে ছিলেন আবুল কালামও। তাঁর স্ত্রী জাহানারা বলেন, ‘‘আমাদেরও বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। তবে পঞ্চায়েত সমিতি একটা ত্রিপল দিয়েছে। সেটা দিয়ে চাল ঢেকেছি। তবুও বর্ষায় জল পড়ছে। কী আর করা যাবে! দিনের পর দিন তো আর নিজের ঘর ছেড়ে থাকা যায় না।’’
নুরের বাড়িটা আর ত্রিপল দিয়ে ঢাকার অবস্থাতেও নেই। পাঁচলার বাসিন্দা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা ফরিদ মোল্লার অভিযোগ, ‘‘নুর কালামের মতো বহু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত একটি পয়সাও ক্ষতিপূরণ পাননি। আমরা বার বার আন্দোলন করেছি। তার পরেও পাঁচলায় অর্ধেকের বেশি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন।’’
এ কথা মানেননি তৃণমূল পরিচালিত পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ জলিল। তাঁর দাবি, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কোনও রাজনৈতিক রং দেখা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy