দুর্ঘটনা: ট্যাঙ্কার থেকে গ্যাস সরানোর কাজ চলছে।
তিন ইঞ্চির ফাটল। আর তার জেরে গ্যাস ছড়িয়ে সারা রাত আতঙ্কে কাটালেন তিনটি গ্রামের মানুষ। সোমবার রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বন্ধ রইল যান চলাচল। হাওড়ার বাগনানের টেঁপুর গ্রামের এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কালঘাম ছুটে গেল পুলিশের। পরিস্থিতি মিটতে মিটতে গড়িয়ে গেল মঙ্গলবার দুপুর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে মুম্বই রোড ধরে হলদিয়া থেকে বজবজ যাচ্ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার একটি এলপিজি বহনকারী ট্যাঙ্কার। টেঁপুর গ্রামের কাছে ট্যাঙ্কারটির পিছনে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। ট্যাঙ্কারটির পিছনে উপরের অংশে ইঞ্চি তিনেক ফেটে যায়। সোমবার রাত দশটা নাগাদ সেই দুর্ঘটনার পরই যানজট শুরু হয় জাতীয় সড়কে। আর ট্যাঙ্কারের ওই ফাটল থেকে টেঁপুর ও তার সংলগ্ন ঘোড়াঘাটা, নবাসন এলাকায় গ্যাস ছড়াতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফাটল থেকে গ্যাস বেরোনর সঙ্গে সঙ্গে তা মেঘের মত সাদা ধোঁওয়া তৈরি করে। হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে চলে আসেন। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই বাড়ি রেবা গুড়ের। তিনি বললেন, ‘‘হঠাৎ রাতে একটা জোরে শব্দ হল। বেরিয়ে এসে দেখলাম ট্যাঙ্কার থেকে হু হু করে গ্যাস বেরোচ্ছে। আতঙ্কে সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।’’ আসে বাগনান থানার পুলিশও। দমকলের দুটি ইঞ্জিন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। হাওড়ার দিকে মানকুর মোড় এবং কোলাঘাটের দিকে ঘোড়াঘাটায় মুম্বই রোডে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল।
পুলিশের পক্ষ থেকে খবর দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাটিকে। সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা কল্যাণী থেকে আসেন রাত ১২টা নাগাদ। তার আগে স্থানীয় বাসিন্দারা ফাটলের মুখে সাবান, ভিজে গামছা এবং ভিজে চটের টুকরো চেপে ধরেন। দমকলের পক্ষ থেকে ফাটলের মুখে জল দেওয়া হয়। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঘরে বা বাইরে আগুন না জ্বালানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়।
মঙ্গলবার ভোরেও জাতীয় সড়কে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি। ছবি: সুব্রত জানা।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্যাঙ্কারটিতে ১৬ টন এলপিজি ছিল। ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থলে আসার পরে সংস্থার বীরশিবপুর পাম্প থেকে একটি খালি ট্যাঙ্কার আনা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ফাটল ধরা ট্যাঙ্কার থেকে গ্যাস খালি ট্যাঙ্কারে চালান করে দেওয়া। রাত ১টা নাগাদ গ্যাস চালান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যায়, কাজটি কঠিন। বিকল্প হিসাবে ঠিক হয়, কিছুটা গ্যাস বের করে দিয়ে ফাটলটি সিল করে দেওয়া হবে।
সেইমতো রাত ২টো নাগাদ ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে কিছু পরিমাণ গ্যাস বের করা দেওয়া হয়। এতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। ট্যাঙ্কারের ভিতরে চাপ কমে যায়। তারপরে রবার এবং ধাতব পাত ব্যবহার করে ফাটলের মুখ সিল করে দেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্যাঙ্কার এবং খালি ট্যাঙ্কারটি নিয়ে যাওয়া হয় বীরশিবপুরে। সেখানে সংস্থার পাম্পে ট্যাঙ্কারটি খালি করা হয়।
কিন্তু ততক্ষণে যানজট ভয়াবহ আকার নিয়েছে মুম্বই রোডে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ট্রাক, বাস। ছোট গাড়িগুলিকে পুলিশ মানকুর মোড় এবং আমতা মোড় দিয়ে সরিয়ে দেয়। সকাল পাঁচটা নাগাদ মুম্বই রোডে যান চলাচল শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy