নদীপাড়ের রাস্তা আলোহীন। গাদিয়াড়ায়।
মরসুম শুরু হতে না হতেই পর্যটন কেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে হাওড়ায়। জেলার দুই প্রধান কেন্দ্র নিয়ে অসন্তোষ জানাচ্ছেন পর্যটকেরা।
শীত পড়তেই হাওড়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র গড়চুমুকের মিনি জু’তে চড়ুইভাতির মরসুম শুরু হয়েছে। পারিবারিক চড়ুইভাতি তো রয়েইছে, বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী-সহ পিকনিক পার্টি আসতে শুরু করেছে। পিকনিক স্পটের চেহারায় কিছুটা উন্নতি চোখে পড়লেও নানা রকম সমস্যাও আছে। গাদিয়াড়ায় প্রবেশ-মূল্য বৃদ্ধি হলেও পরিষেবা বাড়েনি। ক্ষুব্ধ পর্যটকেরা।
দামোদরের তীরে শান্ত পরিবেশে পর্যটক টানতে কয়েক বছর আগে হাওড়া জেলা পরিষদ ও বন দফতর গড়চুমুকের মিনি জু সাজার কাজ শুরু করেছে। কিছু কাজ —যেমন হরিণের বিশ্রামের ছাউনি, পাখির খাঁচা, কুমির রাখার পুকুর তৈরি, শৌচালয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আরও কিছু বন্য প্রাণী রাখার জায়গা, পশুদের চিকিৎসালয়, নতুন টিকিট ঘর-সহ পরিকাঠামোগত নানা কাজ চলছে। আপাতত এখানে ১১০টি হরিণ, ২টি সজারু, কয়েক হাজার কচ্ছপ ৪টি ময়ূর আছে। সম্প্রতি সোনালি নামে বছর নয়েকের এক কুমির আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা এতে পর্যটক বাড়বে।
ভাঙাচোরা রান্নার জায়গা। গাদিয়াড়ায়।
তবে পরিকাঠামোগত কিছু খামতি এখনও রয়েছে। যেমন, পর্যাপ্ত আলো নেই। কয়েকটি ভেপার ল্যাম্প, সৌর বিদ্যুতের খান দশেক স্তম্ভ থাকলেও একটিতেও আলো জ্বলে না। কিছু বাতিস্তম্ভ ভেঙে পড়ে রয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায় এলাকা। ফলে যে সব পর্যটক রাতে জেলা পরিষদের অতিথি আবাসে থাকেন তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। অতিথি আবাসে ভাঙাচোরা আসবাব ও শয্যা ভাল নয় বলে পর্যটকদের অভিযোগ।
সম্প্রতি মিনি জু-এ গিয়ে দেখা যায়, জেলা পরিষদের তরফে দু’টি শৌচালয় হলেও পুরুষ শৌচালয়টি তালাবন্ধ। নানা জায়গায় নোংরা থালা পড়ে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুর থেকে চড়ুইভাতি করতে এসেছিল একটি দল। তাদেরও দাবি, জায়গাটি আরও একটু পরিচ্ছন্ন হওয়া দরকার। তবে পানীয় জলের সুব্যবস্থা রয়েছে।
হাওড়া জেলা পরিষদে বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু বলেন, ‘‘আলোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী কম থাকায় অনেক বার সৌরবিদ্যুতের মেশিন চুরি হয়ে গেছে। তবে সেগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা হবে। অন্য যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো মেটানোর পরিকল্পনা হয়েছে।’’ উলুবেড়িয়া রেঞ্জ আধিকারিক অমরেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরাও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত বকেয়া কাজগুলো শেষ করা যায়।’’
ভেঙে পড়ে আছে সৌর আলোর স্তম্ভ। গড়চুমুক।
রূপনারায়ণ আর ভাগীরথী নদীর সংযোগ স্থলে গাদিয়াড়ায় সরকারি লজ রয়েছে। সপ্তাহান্তিক ছুটি কাটাতে অনেকে এখানে আসেন। আর শীতের সময়ে অনেকে আসেন চড়ুইভাতিতে। চড়ুইভাতির নির্দিষ্ট জায়গায় প্রবেশ মূল্য দিতে হয় পর্যটকদের। কিন্তু সেটা বেশি বলে অভিযোগ। ৭ জনের জন্য সাড়ে তিনশো টাকা, ১২ জনের জন্য ৫০০, ২০ জনের জন্য ৮০০, ৪০ জনের জন্য হাজার টাকা, ৫৫ জনের জন্য দেড় হাজার টাকা, দেড়শো জন পর্যন্ত দু’হাজার টাকা লাগে। অথচ পরিষেবা খুবই খারাপ। খাওয়ার জন্য কোনও ছাউনি নেই। রান্নার জন্য দুটি ছাউনি থাকলেও তা ব্যবহারের যোগ্য নয়। মূল দুটি শৌচালয় রয়েছে, কিন্তু সেগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়। নদীর পাড়ের রাস্তাটি পিচের করা হয়েছে। সেখানে বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু তা অপরিকল্পিত। নদীর পাড় সাজানো ও আলোর ব্যবস্থা হয়নি। সরকারি এই লজে বিদ্যুতের সমস্যার সমাধানও হয়নি। ৩২টির মধ্যে ৮টি ঘরে বাতানুকূল ব্যবস্থা থাকলেও গরমে মাত্র খান চারেক চালানো যায়।
শৌচাগার থাকলেও তা তালাবন্ধ। গড়চুমুক।
তবে পর্যটকরা বেশি ক্ষুব্ধ প্রবেশ-মূল্য নিয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গৌরা থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন একটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অসীম সেনাপতি, জয়ন্ত শাসমল নামে দু’জন বলেন, ‘‘৪০ জনের জন্য পার্কিং ফি মিলিয়ে ১১০০ টাকা দিতে হল। ছাত্রদেরও ছাড় নেই। এমন জানলে আসতাম না।’’ পর্যটন দফতরের এক কর্তা জানান, উন্নয়নের পরিকল্পনা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে। জেলার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন জানান, জেলার সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রে যাতে নিরাপত্তা থাকে সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশও রয়েছে।
ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy