গাদিয়াড়ায় সরকারি লজ। ছবি: সুব্রত জানা।
একই গাদিয়াড়ার যেন দুই রূপ!
এক দিকে আলো, অন্য দিকে আঁধার। এক দিকে দিন দিন ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। অন্য দিকে, মাছি তাড়াচ্ছেন লজ-হোটেল মালিকেরা।
হাওড়া জেলার অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র গাদিয়াড়ার অবস্থান শ্যামপুরেই। তবে, পর্যটনকেন্দ্রকে দু’টি অংশে ভাগ করা যায়। একটি অংশ বেসরকারি লজ এবং হোটেলগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যে জায়গায় অভাব রয়েছে পর্যটকদের। তার প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পর্যটন দফতরের লজকে ঘিরে তৈরি হয়েছে গাদিয়াড়ার অন্য অংশটি। যেখানে উপচে পড়ছে ভিড়।
হুগলি নদী এবং রূপনারায়ণ নদের মিলনস্থল গাদিয়াড়া। শ্যামপুরের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে আবর্তিত হয়েছে চাষাবাদকে কেন্দ্র করে। পরে আসে ইটভাটা। অর্থনীতিতে নতুন পালক জুড়তেই আটের দশকের গোড়ায় গাদিয়াড়ায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। এই এলাকার আকর্ষণ বাড়াতে প্রকৃতি একাই একশো। দুই নদীর মিলনস্থল দেখতে ছুটে আসেন পর্যটকেরা।
কিন্তু বেসরকারি লজ এবং হোটেলগুলির বেশিরভাগেই যখন দেহ ব্যবসার রমরমা চলে বলে অভিযোগ উঠছে, তখন উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে সরকারি লজের অংশটিতে। আক্ষরিক অর্থেই এটি হয়ে উঠেছে একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র। বেসরকারি লজ এবং হোটেলগুলি যখন মাছি তাড়াচ্ছে, সরকারি লজের ঘরগুলি তখন অধিকাংশই ভর্তি। লজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যটন দফতরের কর্মীরা সেই কারণেই গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন, ‘‘অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে এখানে প্রকৃত পর্যটকেরাই আসছেন। দিনের পর দিন তাঁদের ভিড় বাড়ছে। এই গাদিয়াড়া অন্যদের থেকে আলাদা।’’
লজে রয়েছে ৩২টি ঘর। বিশাল চত্বরের পুরোটাই প্রাচীর ঘেরা। রয়েছেন সর্বক্ষণের নিরাপত্তারক্ষী। হুগলি নদীর ধারে রয়েছে বসার বেঞ্চ। সন্ধ্যা থেকে এখানে ভিড় জমে পর্যটকদের। অনেক রাত পর্যন্ত নিরাপদে ঘোরেন তাঁরা। তবে, প্রথম দিকে পরিকাঠামোগত সুবিধা বলতে কিছুই ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল খারাপ। স্থানীয় একটি চালকল কিনে নিয়ে সেটিকেই লজের রূপ দেওয়া হয়। প্রথম দিকে পরিকাঠামোর উন্নতি না হওয়ায় এখানে পর্যটক যতটা না আসতেন, তার থেকে বেশি অনুষ্ঠিত হত সরকারি বৈঠক। নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষকদের এখানে রাখা হত। ধীরে ধীরে চেহারা পাল্টায় এই পর্যটনকেন্দ্রের। তৈরি হয় ঝাঁ-চকচকে রাস্তা। নদীর পাড় বরাবরও পিচের রাস্তা তৈরি হয়েছে। সরকারি লজের চত্বরেও গর্ত বুজিয়ে বাগান তৈরি করা হয়েছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে। চালু হয়েছে ধর্মতলা থেকে গাদিয়াড়া পর্যন্ত সিটিসি বাস। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে চালু হয়েছে বাগনান-গাদিয়াড়া বেসরকারি বাস চলাচলও।
তা সত্ত্বেও পর্যটকদের অভাব বোধ করেন বেশিরভাগ বেসরকারি লজ-হোটেলের মালিকেরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, দেহ ব্যবসার কারণে এই সব লজ এবং হোটেলগুলিতে ঘন ঘন পুলিশ হানা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দিনের বেলাতেই যেন ঘুমিয়ে থাকে এগুলি। কিন্তু সরকারি লজকে কেন্দ্র করে যে পরিবেশ, তাতেই বোঝা যায়, অনেকটাই বদলে গিয়েছে গাদিয়াড়া। আক্ষরিক অর্থেই সাপ্তাহান্তিক পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে এই এলাকা।
তবে, কিছু অসুবিধার কথাও শোনা গিয়েছে সরকারি লজকে ঘিরে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, হুগলি নদীর ধারে বসার বেঞ্চ এবং পুলিশের নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন সেখানকার কর্মীরা। একই সুর পর্যটকদের গলাতেও। সপরিবারে কলকাতা থেকে সরকারি লজে বেড়াতে এসেছেন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি বললেন, ‘‘লজের বাতানুকূল ব্যবস্থা তেমন কার্যকর নয়। নদীর ধারে বসার বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়ানো হলে ভাল। রাতে নদীর পাড়ে পুলিশের টহলদারি প্রয়োজন। কারণ, মহিলারা বসে থাকেন।’’ পর্যটন দফতরের কর্তারা জানান, বিদ্যুতের জোগান অপর্যাপ্ত। ফলে, আটটি বাতানুকূল ঘর থাকলেও চারটির বেশি ঘরে এই ব্যবস্থা চালানো যায় না। গাদিয়াড়ায় ইতিমধ্যেই শ্যামপুর থানার পক্ষ থেকে একটি পুলিশ ফাঁড়ি করা হয়েছে। প্রয়োজনে রাতে পুলিশের টহলদারি বাড়ানো হবে বলে জানান গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা।
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অবশ্য সরকারি লজের আশপাশের এলাকার উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের সমস্যা মেটানোর জন্য ওই দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
সেজে উঠুক গোটা পর্যটনকেন্দ্র— এমনটাই তো চান সকলে।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy