প্রতীকী ছবি।
কারখানায় যন্ত্র নিয়ে যেতে হলে রাস্তা নির্মাণ করে নিতে হবে উদ্যোগপতিকেই—তৃণমূল পরিচালিত হুগলির চণ্ডীতলা-২ পঞ্চায়েতের এই ‘ফরমানে’র খবর প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল। সুযোগ পেয়ে তৃণমূলের গায়ে ফের একবার ‘শিল্পবিরোধী’ তকমা সেঁটে দিতে তৎপর বিরোধীরাও। এই পরিস্থিতিতে দলের স্থানীয় নেতাদের ওই উদ্যোগপতির পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। পাশাপাশি ৭২ লক্ষ টাকা খরচ করে কেনা যন্ত্রটি যাতে ওই উদ্যোগপতি তাঁর কারখানায় নিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য উদ্যোগী প্রশাসনও। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা: বিড়ম্বনায় পড়ে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে তৃণমূল ও প্রশাসন।
চণ্ডীতলার বাসিন্দা উদ্যোগপতি গুরুপদ ঘোষের একটি কারখানা রয়েছে শীতলাতলায়। ব্যাঙ্ক থেকে ৭২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে গত জুলাইয়ে একটি যন্ত্র কেনেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের চাপে বেঙ্গালুরু থেকে আনা যন্ত্রটি তিনি কারখানায় নিয়ে যেতে পারছেন না। তাঁকে সেই অনুমতি দিচ্ছে না চণ্ডীতলা-২ পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। পঞ্চায়েত এবং এলাকাবাসীর একাংশের যুক্তি, যন্ত্রটি নিয়ে গেলে রাস্তার ক্ষতি হবে। তাই পঞ্চায়েতের ফরমান—যন্ত্রের ভার বহনে সক্ষম, এমন শক্তপোক্ত রাস্তা তৈরি করতে হবে গুরুপদবাবুকেই। তারপর তিনি সেই রাস্তা দিয়ে যন্ত্রটি নিয়ে যেতে পারবেন।
এই অবস্থায় যন্ত্রটি আপাতত ভাড়ায় নেওয়া একটি শেডে রেখেছেন গুরুপদবাবু। প্রত্যেক মাসে ঋণের কিস্তির মোটা টাকা মেটাতে হচ্ছে তাঁকে। গোটা ঘটনায় বিব্রত গুরুপদবাবুর প্রশ্ন, ‘‘শিল্পের জন্য রাস্তা বা পরিকাঠামো নির্মাণ করা কি উদ্যোগপতির কাজ। সেই কাজ তো সরকারের।’’ বিষয়টি রবিবার আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে শাসকদল ও শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসন। গুরুপদবাবুর দাবি, এ দিন সকালেই তাঁকে ফোন করেন মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) সম্রাট চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘যন্ত্রটি যাতে কারখানায় নিয়ে যেতে পারি, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন উদ্যোগী হবে বলে আমাকে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।’’
প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে।’’ এ দিকে, তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব এ দিন ওই বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে সকলের কথা হয়েছে। আশা করছি, সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে। ওই উদ্যোগপতির পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া উচিত ছিল প্রশাসন বা আমাদের দলের স্থানীয় নেতাদের। তা হলে এত দূর গড়াত না।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘কোনও শিল্পপতি অযথা সমস্যায় পড়ুন, তা চাই না। স্থানীয় মানুষজন অনেক সময় বুঝে, বা না বুঝে, বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেন।’’
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে তৃণমূলকে নিশানা করেছে সিপিএম এবং বিজেপি। সিপিএম জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের তীর্যক মন্তব্য, ‘‘এই সব কারণেই তো রাজ্য ছেড়ে শিল্পপতিরা পালাচ্ছেন। প্রশাসন কিছু দেখে না। শাসকদলের কেষ্ট-বিষ্টুরা সবকিছুতে মাথা গলান। প্রশাসন ঘুমিয়ে থাকে। নাকাল হন উদ্যোগপতিরা।’’ আর বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক সভাপতি শ্যামল বসুর কটাক্ষ, ‘‘সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পপতি, শাসকদলের দাদাগিরিতে জেরবার সকলেই।’
’গুরুপদবাবু বলেন,‘‘আমাকে বলা হয়েছে, উপযুক্ত মানের রাস্তা তৈরি করে তবেই সেখানে গাড়ি ঢোকানো যাবে। প্রশাসনকে সমস্যার কথা বলেও সুরাহা পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন, প্রশাসন সব সময় নতুন উদ্যোগের পাশে থাকবে। কিন্তু পাশে কাউকে পাচ্ছি না।’’ ওই যন্ত্র নিয়ে যেতে যাঁরা বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, এখন কী বলছেন তাঁরা?
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য অনাথ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘কোনও কিছুতেই আমরা বাধা দিইনি। স্থানীয় মানুষজন আপত্তি করেছিলেন। সে কথাই শুধু ওই শিল্পপতিকে জানিয়েছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy