Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ঋণ শোধ করতে ‘হুমকি’, বিক্ষোভ

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাণীবন গায়েনপাড়ার প্রায় ২৫-৩০ বাসিন্দা ওই বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

ঋণগ্রহীতার বাড়িতে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। ছবি: সুব্রত জানা

ঋণগ্রহীতার বাড়িতে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। ছবি: সুব্রত জানা

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০২:৫১
Share: Save:

ঋণের কিস্তির টাকা শোধ করতে না-পারায় ঋণগ্রহীতাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বেসরকারি একটি ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়ে এলাকা ছাড়েন তাঁরা। শনিবার দুপুরে উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানার বাণীবন গায়েনপাড়ার ঘটনা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাণীবন গায়েনপাড়ার প্রায় ২৫-৩০ বাসিন্দা ওই বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ‘লকডাউন’-এর জেরে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই কিস্তির টাকা শোধ করতে পারেননি। এ দিন ওই গ্রামে গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কের কয়েকজন কর্মী। অভিযোগ, তাঁরা বকেয়া কিস্তি শোধ করার জন্য ঋণগ্রহীতাদের উপরে চাপ তৈরি করেন। এমনকি, হুমকিও দিতে থাকেন। অঞ্জু মাঝি নামে এক ঋণগ্রহীতা জানান, আট মাস আগে ব্যবসা শুরুর জন্য তিনি ওই ব্যাঙ্ক থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। মাসিক কিস্তি ধার্য হয়েছিল ৪,৩০০ টাকা। ঋণ শোধের মেয়াদ ছিল দুই বছর। প্রত্যেক মাসে ঋণ পরিশোধ করছিলেন অঞ্জুদেবী। ‘লকডাউন’ ঘোষণার পরেও এক মাস কিস্তির টাকা দিয়েছিলেন। তারপর ব্যবসা বন্ধ হয়ে তাই দু’মাস তিনি টাকা দিতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কয়েকদিন সময় দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের কর্মীদের পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা হুমকি দিতে থাকে। আসবাবপত্র তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।’’

সুমিত্রা দলুই নামে আর এক ঋণগ্রহীতার অভিযোগ, ‘‘বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে ঋণের টাকা শোধ করতে বলেন ব্যাঙ্কের কর্মীরা। সকাল ৯টা থেকে ঘরের মধ্যে বসেছিলেন ওঁরা। রান্না পর্যন্ত করতে দেননি।’’

দুপুর ২টো নাগাদ গ্রামের মানুষ ব্যাঙ্কের কর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর তাঁরা গ্রাম ছেড়ে চলে যান বলে দাবি গ্রামবাসীর একাংশের। বিক্ষোভের কথা শুনে গ্রামে গিয়েছিল পুলিশ। তবে ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন হাওড়া গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার সৌম রায়। তিনি বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে’’

বিডিও (উলুবেড়িয়া ২) নিশীথ কুমার মাহাতো বলেন, ‘‘সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ককে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য যেন চাপ না-দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ঋণ পরিশোধের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ব্যাঙ্কের হাওড়া জেলার সহকারী ম্যানেজার রঞ্জন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘জেলায় দুই লক্ষের বেশি মহিলাকে ব্যবসা করে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ঋণ দিয়েছি। লকডাউন চলাকালীন কিস্তি আদায় করতে যাইনি। আনলক-পর্ব শুরু হওয়ার পরে ব্যাঙ্কের কর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের কাছে গিয়ে কিস্তির টাকা অল্প-অল্প করে শোধ করার অনুরোধ করেছিলেন। অনেকগুলি কিস্তি বকেয়া পড়ে গলে ঋণগ্রহীতাদের সমস্যা হবে। সে কথা বুঝিয়ে বলতেই কর্মীরা এ দিন গ্রামে গিয়েছিলেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘কিন্তু তাঁরা তা দিতে রাজি হয়নি। আমাদের কর্মীরা এর পরেই চলে আসেন। কোনও হুমকি তাঁরা দেননি। ঋণগ্রহীতাদের একাংশ যে অভিযোগ করছেন, তা সত্য নয়।’’

জ্যোৎস্না দলুই নামে এক ঋণগ্রহীতার প্রশ্ন, ‘‘ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে বলেছে সরকার। তারপর কী ভাবে ব্যাঙ্কের কর্মীরা হুমকি দিয়ে কিস্তির টাকা শোধ করতে বলে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy