সফল: নতুন নজির বাংলার সায়নীর। টুইটার
জলের সঙ্গে কঠিন লড়াই করে সদ্য ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়েছেন কালনার সায়নী দাস। তাঁর সাফল্যে খুশির জোয়ার বইছে রিষড়া, শ্রীরামপুরেও।
সায়নী শ্রীরামপুর কলেজের ইতিহাস অনার্সের ছাত্রী। লক্ষ্য জয়ের জন্য গত কয়েক মাস প্র্যাকটিস করছিলেন রিষড়া সুইমিং ক্লাবে। ক্লাবের পিছনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকছিলেন। কখনও সন্ধ্যা থেকে সারারাত পুলে সাঁতরেছেন, কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থেকেছেন গঙ্গায়। গত বুধবার ১৪ ঘণ্টা ৮ মিনিটে পেরিয়েছেন ইংলিশ চ্যালেন।
এই সাফল্যে কথা জানার পরে শ্রীরামপুর কলেজের অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগ্লুরা বলেন, ‘‘সামনেই কলেজে দ্বি-শতবর্ষ উৎসব। এমন সময় সায়নীর পারফর্ম্যান্স একটা চমকপ্রদ ব্যাপার। আমরা খুব খুশি।’’ গর্বিত কলেজের গেমস ইনচার্জ প্রণব পাল। তিনি বলেন, ‘‘সায়নী দেখিয়ে দিল, লক্ষ্য স্থির থাকলে কোনও প্রতিকূলতাই বাধা হতে পারে না।’’
কলেজের প্রাক্তনী সংসদের সাধারণ সম্পাদক অন্বয় চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডে সায়নীকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অন্বয়বাবু বলেন, ‘‘এই জেলার গর্ব বুলা চৌধুরী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়েছিলেন। বর্ধমানে জন্মেও সায়নী যেন আমাদের জেলারই মেয়ে হয়ে গিয়েছে।’’ আর কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, ইতিহাসের ছাত্রী নিজেই ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন।
সায়নীর সঙ্গে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন তাঁর বাবা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক রাধেশ্যামবাবু। তিনিই ছোট থেকে মেয়েকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেন। মেয়ে ইংলিশ চ্যানেল পেরনোর সময়েও পাশে পাইলট বোটে ছিলেন তিনি। তিনি জানান, একে ক্রমাগত কমতে থাকা তাপমাত্রা, তার উপর ঢেউ, ভাসমান শ্যাওলা, জলজ উদ্ভিদের কাঁটা বারবার গায়ে জড়িয়ে যাওয়ায় খুবই মুশকিলে পড়ছিল সায়নী। পরে কিছুটা ধাতস্থ হয়। সব থেকে বেশি মুশকিল হয় জেলিফিশে। সায়নী বলেন, ‘‘কালনার গঙ্গায় স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটেছি। এটা ফ্রান্সে ঢোকার মুখে খুব সাহায্য করেছে।’’
এক বছর ধরে ইংলিশ চ্যানেলের প্রস্তুতিতে ডুবে ছিলেন সায়নী। কখনও কুমোরটুলির গঙ্গায়, কখনও আহিরীটোলায়, কখনও বহরমপুরের দূরপাল্লার সাঁতারে নেমেছেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আন্তঃকলেজ সাঁতারে সায়নী ২০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে দ্বিতীয় হন। ৫০ মিটার এবং ৪০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে তৃতীয়। এ বছরে আগামী মাসে ওই প্রতিযোগিতা রয়েছে। ইংলিশ চ্যানেল জয় করার পরে এই প্রতিযোগিতাতেও সোনা জেতার জন্য নামবেন বলে ফোনে প্রত্যয়ের সুরেই জানান সায়নী।
রিষড়া সুইমিং ক্লাবের কোচ তমাল দাস বলেন, ‘‘সায়নী খুব জেদি। সহজে হার মানতে চায় না। বহরমপুরে গঙ্গায় ৮১ কিলোমিটার সাঁতারেই বুঝেছিলাম, ও পারবে।’’
সায়নীর বিদেশযাত্রার জন্য শ্রীরামপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তরফে ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। শ্রীরামপুর কলেজের প্রাক্তনী সংসদের তরফেও অর্থসাহায্য করা হয়। সকলের সহযোগিতা এবং সাহায্য ছাড়া লক্ষ্যে সফল হওয়া যে সম্ভব হতো না, মানছেন
ইতিহাসের ছাত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy