যানজটে ভোগান্তি চলছেই সাঁতরাগাছি রেল সেতুতে। — নিজস্ব চিত্র
জমি ছিল। প্রস্তুত ছিল সেতু তৈরির নকশাও। অভিযোগ, তবু গত দেড় দশকেও সাঁতরাগাছিতে দ্বিতীয় রেল সেতু তৈরির কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি রাজ্য সরকার। তা সে বামই হোক বা তৃণমূল। কাজেই প্রথম সেতু দিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে দু’মুখী যান চলাচল। আর সময় যত গড়িয়েছে, এই সেতুটি ক্রমশ মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। নিত্যদিন সেখানে যানজট ও একের পর এক দুর্ঘটনার পরেও কেন প্রস্তাবিত ওই দ্বিতীয় সেতু তৈরি করা হয়নি, এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে।
রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির সময়েই ঠিক হয়েছিল সাঁতরাগাছিতে মোট চার লেনের দু’টি রেল সেতু তৈরি হবে। সেই মতো জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। পোঁতা হয়েছিল পিলারও। ঠিক ছিল প্রথম সেতুটি তৈরির পরেই তার পাশে তৈরি করা হবে দ্বিতীয় সেতুটি। এ জন্য প্রথম সেতুটির নির্মাণকারী সংস্থাকে অধিগৃহীত জমিতে অফিস করে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করার পরেও রাজ্য সরকারের কোনও সবুজ সঙ্কেত না পাওয়ায় অফিস তুলে নিয়ে চলে যান। ফলে প্রথম সেতুর দুই লেনের ১০.৫৮ মিটার রাস্তা দিয়েই শুরু হয়ে যায় দু’মুখী যানচলাচল। যা অব্যাহত রয়েছে আজও।
সূত্রের খবর, নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় রাজ্য পুর ও নরোন্নয়ন দফতরের তরফে সাঁতরাগাছি রেল সেতু তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় কেএমডিএ-কে। সেতুর নকশা তৈরি করে কেএমডিএ। যদিও তারা ওই কাজ করেনি, সেতু তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মোট তিনটি সংস্থাকে। এর মধ্যে সেতুর পূর্ব দিকের ৪৩২ মিটার অংশের কাজ দেওয়া হয় গ্যামন ডাঙ্কি সংস্থাকে। মাঝের অংশ যেহেতু রেলের, তাই ওই কাজের বরাত দেওয়া হয় ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশনকে। আর সেতুর পশ্চিম দিকের ৪১৭ মিটার অংশের কাজের দায়িত্ব পায় এসপি মল্লিক অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। বুধবার ওই সংস্থার এমডি জগমোহন কপূর জানান, সাঁতরাগাছি সেতু তৈরির সময়ে ঠিক হয়েছিল তা চার লেনের করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দুই লেনের সেতুটি তৈরির পরে আমাদের সংস্থাকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় সেতু তৈরি হবে। এ জন্য অপেক্ষাও করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস অপেক্ষা করার পরে আমরা চলে আসি।’’
কেএমডিএ-র এক প্রাক্তন পদস্থ কর্তা জানান, সাঁতরাগাছি দ্বিতীয় সেতুটি তৈরি হয়নি মূলত অর্থাভাবে। কারণ একটি সেতু তৈরি করতে গিয়ে সব টাকাই খরচ হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাঙ্ক আর টাকা দেয়নি। রাজ্য সরকারও অর্থ মঞ্জুর করেনি।’’
এ দিকে গত মাসে সাঁতরাগাছি সেতুতে দুর্ঘটনার জেরে অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যর পরেই মূলত ওই সেতুর দূরাবস্থা নিয়ে টনক নড়ে প্রশাসনের। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলুড় যাওয়া-আসার পথে ওই সেতুতে নেমে পুলিশ ও প্রশাসনকে কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। যার মধ্যে রয়েছে সেতুতে ক্লো়জ্ড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো, বেআইনি পার্কিং সরানো ইত্যাদি। যদিও তার পরেও ওই সেতুর উপর দুর্ঘটনার রেশ কমেনি। এলাকার বাসিন্দারা তাই প্রশ্ন তুলেছেন, সেতুর জন্য জমি বরাদ্দ থাকা সত্বেও রাজ্য সরকার কেন দ্বিতীয় সেতু তৈরি করতে উদ্যোগী হল না।
সাঁতরাগাছির প্রবীণ বাসিন্দা অচ্যুতানন্দ মোদকের কথায়, ‘‘এখানে তো জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই তা সত্বেও কেন সাঁতরাগাছি দ্বিতীয় হচ্ছে না? তাহলে তো নিত্যদিনের যানজট আর দুর্ঘটনা বন্ধ হয়।’’
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরাদ হাকিমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ও সাঁতরাগাছি সেতু নিয়ে সমীক্ষা চলছে। আর একটি সেতু যাতে তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy