—প্রতীকী ছবি।
বাবা মারা গিয়েছেন দু’বছর আগে। মায়ের ফুসফুসে জল জমে চিকিৎসা চলছে। তাই মেয়ের অমতেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন মা। বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বছর সতেরোর মেয়েটি পড়তে চায়। বড় হয়ে চাকরি করে মায়ের পাশে দাঁড়াতে চায়। নিজেই তাই থানায় গিয়ে বিয়ে আটকাল কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া দাশনগর থানা এলাকার কোনা ধাড়া পাড়ায়।
মঙ্গলবার থানায় গিয়ে আর্জি জানালে ওই কিশোরীর কথায় নড়ে বসে পুলিশ। খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর। সকলে ওই কিশোরীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলে বিয়ে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন মা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সপ্তদশী ওই কিশোরী থানায় পৌঁছে জানায়, ১৮ বছর না হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের লোকেরা তার বিয়ে ঠিক করেছেন। সে বিয়ে করতে চায় না। এর পরেই কিশোরীকে গাড়িতে বসিয়ে সোজা তার বাড়ির উদ্দেশে
রওনা হয় পুলিশ। সেখানে গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ অফিসারেরা। তত ক্ষণে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডলও। সকলে মিলে ওই কিশোরীর মাকে বোঝান, মেয়েদের ১৮ বছর না হলে আইনত বিয়ে দেওয়া যায় না। তা ছাড়া, তাঁর মেয়ে আরও পড়তে চায়। সকলের সামনে এলাকার কাউন্সিলর ওই কিশোরীর মাকে কথা দেন, পরিবারটির পাশে দাঁড়াবেন তাঁরা। ওই কিশোরী যাতে ফের পড়াশোনা শুরু করতে পারে, তার দায়িত্ব নেবেন সকলে মিলে। শেষ পর্যন্ত বিয়ে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কিশোরীর মা।
কোনার ধাড়া পাড়ায় এক চিলতে টালির ঘরে মায়ের সঙ্গে ভাড়া থাকে কিশোরী। এ দিন ওই কিশোরীর মা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করে মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে দিন চালাচ্ছেন তিনি। বই কিনতে না পারায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েও পড়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর মেয়ের। তাই তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলেন। ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমার ফুসফুসে জল জমেছে। চিকিৎসা চলছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে নিজেরটা কোনও রকমে চালিয়ে নিতাম।’’
এ দিকে ফের পড়াশোনা করার সুযোগ মিলবে ভেবেই উচ্ছ্বসিত ওই কিশোরী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিয়ে হয়ে গেলেই তো সব সমস্যার সমাধান হত না। আমি চাই আরও পড়াশোনা করতে। চাকরি করে মায়ের পাশে দাঁড়াব।’’ ওই কিশোরীর আশা, এলাকার কাউন্সিলর, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে নতুন ভাবে পথ চলা শুরু করতে পারবে সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy