অভিযুক্ত: সুলেখাদেবীর খুনের ঘটনায় ধৃত মাধবী-সহ চার। নিজস্ব চিত্র
সুলেখা-হত্যাকাণ্ড চোখ খুলে দিল পুলিশের!
এতদিন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় নির্দেশ ছিল, ভাড়াটের পুরো তথ্য বাড়িওয়ালাকে থানায় জানাতে হবে। সুলেখা-হত্যাকাণ্ডের পরে কমিশনারেটের নতুন নির্দেশ, পরিচারিকার পুরো তথ্যও পুলিশকে জানাতে হবে। যাতে কোনও ঘটনায় পুলিশের কাছে ওই পরিচারিকা সম্পর্কে আগাম তথ্য থাকে। কারণ, সুলেখা-খুনে মূল ‘চক্রী’ যে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচারিকা মাধবী কর্মকার!
ওই খুনের ঘটনায় মাধবীর সঙ্গে ধৃত তার স্বামী বিশু, রাজমিস্ত্রি সুবল এবং আগেই অন্য মামলায় ধরা পড়া দুষ্কৃতী গোর্খাকে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ৮ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা জানান, টানা জেরার মুখেও নির্লিপ্ত ছিল মাধবী। কিছুটা লোভের বশেই সে ওই কাণ্ড ঘটায়।
গত ২৬ অক্টোবর নিজের বাড়িতেই খুন হন ব্যান্ডেলের কাজিডাঙার বাসিন্দা সুলেখা মুখোপাধ্যায়। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষিকা বাড়িতে একাই থাকতেন। মাধবী-সহ দুই পরিচারিকা তাঁর কাজ করতেন। দুষ্কৃতীরা গলার নলি কেটে খুন করে বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধাকে। বুধবার মাধবী-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারীদের দাবি, আগে থেকে ছকা নাটকই গত ২৬ অক্টোবর হুবহু মঞ্চস্থ করেছিল মাধবী। জেরায় সে জানিয়েছে, ডাকাতির পরিকল্পনার পর তারা গোর্খাকে দলে নেয়। কারণ, তারা জেনেছিল, ওই কাজে গোর্খার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২৬ অক্টোবর ভোরে সুলেখাদেবীকে খুনের কয়েক ঘণ্টা পরেও মাধবী যথারীতি ওই বাড়িতে কাজে যায়। স্বাভাবিক কারণেই ডাকাডাকির পরে সাড়া না-পাওয়ায় সে বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য করতে প্রথমে এক বস্তিবাসীর মোবাইল থেকে সুলেখাদেবীকে ফোন করে। তাঁকে মোবাইলে না পেয়ে তাঁর ভাইকে ফোন করে সাড়া না-পাওয়ার কথা জানায়। তারপর রাজমিস্ত্রি সুবলকে ডেকে গেটের তালা কাটায়।
কিন্তু কেন ওই কাজ করতে গেল মাধবী?
তদন্তকারীরা জানান, কোনও সূত্র থেকে মাধবী জেনেছিল, সুলেখাদেবী বোনের বাড়ি থেকে নিজের সোনার গয়না এনে আলমারিতে রেখেছেন। মাধবী সেই সোনা হাতানোর ছক কষে। জেরায় সে জানিয়েছে, ওই ঘটনার কিছুদিন আগে সুলেখাদেবী যখন অসম বেড়াতে গিয়েছিলেন, তখনই সে চুরির পরিকল্পনা করে। কিন্তু পরে তা থেকে কোনও কারণে সরে আসে। ২৬ অক্টোবর ভোরে সুলেখাদেবীকে খুনের পরে তাঁর কিছু গয়না নিয়ে মাধবী, বিশু ও সুবল আগে বেরিয়ে যায়। গোর্খা বাইরের গেটে তালা লাগিয়ে বাড়ির ভিতরের সিঁড়ি দিয়ে ছাদে যায়। আলসে বেয়ে নীচে নেমে পালায়।
মাধবীর ‘কীর্তি’র কথা জানতে পেরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন কাজিডাঙা এলাকার বহু বাসিন্দা। যাঁদের অনেকেই মাধবীকে চিনতেন। মাধবী ওই এলাকায় আরও তিন বাড়ির কাজ করত। এক বাড়ির কর্ত্রী বলেন, ‘‘খুনের পরেও ও রোজ কাজে এসেছিল। কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। এতটাই নির্লিপ্ত ছিল।’’ আর এক বাড়ির কর্ত্রীর খেদ, ‘‘মাধবী আমাদেরও খুব বিশ্বাসের মানুষ ছিল। ও সেই বিশ্বাস ভেঙে দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy