সমবেত: প্রাচীন সেন্ট ওলাভ গির্জার সামনে প্রতিবাদ। ছবি: দীপঙ্কর দে
মাইকের সামনে কবিতা পড়ছিলেন এক ষাটোর্ধ্ব। কবিতার ছত্রে ছত্রে স্পষ্ট হচ্ছিল প্রতিবাদের ভাষা। তাঁর পাশে বসে তখন পোস্টার লিখছে তরুণ-তরুণীর দল। পোস্টারে ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়ার ডাক।
বৃহস্পতিবার এমন ঘটনারই সাক্ষী রইল হুগলির শ্রীরামপুর শহর। একে একে আবৃত্তি, গান চলতে থাকল। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে গিয়ে গলার শিরা ফুলে উঠল। পোস্টারে ছয়লাপ হল চত্বর। এনআরসি, সিএএ, এনপিআর রোখার দাবিতে এ ভাবেই সুর চড়ল। এক টুকরো পার্ক সার্কাস বা শাহিনবাগ ধরা পড়ল এই শহরেই।
নাগরিকত্ব আইনের বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই এর নেপথ্যে ‘ধর্মের নামে বিভাজনের’ অভিসন্ধির অভিযোগ তুলে শ্রীরামপুরে নাগরিকদের একাংশ আন্দোলনে নেমেছেন। শ্রীরামপুর নাগরিক উদ্যোগের আহ্বানে মিছিল, পথসভা হয়। এ দিন তারাই ‘সাংস্কৃতিক অবস্থান’-এর ডাক দিয়েছিল আদালতের পাশে দ্বিশতবর্ষ প্রাচীন সেন্ট ওলাভ গির্জার সামনে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি। কলেজ পড়ুয়া থেকে বিভিন্ন বয়স এবং পেশার মানুষ দলমত নির্বিশেষে তাতে সামিল হলেন। পোস্টারে লেখা হল, ‘ধর্মের বন্দুক তাক করে রাজনীতি আর চলবে না। কাগজ আমরা দেখাব না’। তার নিচে লেখা ‘নো এনআরসি’। কোনও পোস্টারে ফুটে উঠল, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, লড়াই চলুক’।
প্রিয়াঙ্কা দে নামে এক তরুণী নাট্যকর্মী একের পর এক পোস্টার লিখছিলেন। মাঝে লেখা থামিয়ে গান গাইলেন। সেই গানে ‘স্বাধীনতা হরণের যন্ত্রণা’ ফুটে উঠল। কেন এ ভাবে রাস্তায় নামা? কার্যত ফুঁসে উঠে বললেন, ‘‘সমাজের বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য এই কর্মসূচি। ধর্মের জিগির তুলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ আসলে ব্যর্থতাতে চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা। যুব সমাজের চাকরি নেই। সেই বাস্তবতা ভুলিয়ে দিলে চলবে কী করে!’’
গানের কলিতে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সুর বাঁধলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উপমা নির্ঝরণী। যাদবপুরে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত। জাতপাতের ছোঁয়াচ থেকে দূরে রাখার বাসনায় বাবা-মা পদবী রাখেননি মেয়ের। তাঁর বাবা, মনোবিদ মোহিত রণদীপ (তিনি যাদবপুরের প্রাক্তনী) নিজেও দীর্ঘদিন ধরে পদবী ব্যবহার করেন না। মোহিতের কথায়, ‘‘পদবির মধ্যে জাতভিত্তিক অবস্থান মিশে থাকে। সেই কারণেই আমাদের এই ভাবনা।’’
কর্মসূচিতে ছিলেন কবি বিষ্ণু বিশ্বাস। তিনি কবিতা পাঠ করেন। তাঁর ছেলের নাম আকাশ অনন্ত। জাতপাতের কারণেই তিনিও ছেলের পদবি রাখেননি। বিষ্ণুবাবু বলেন, ‘‘আকাশ জেএনইউ-তে ছাত্র আন্দোলনে সামিল। আকাশ, উপমারা যে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এবং জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ভেবে ভাল লাগে। ওরা আমাদের সিদ্ধান্তের সার্থকতা বয়ে চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy