এই পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসকেরা আবহাওয়ার তারতম্যকেই দায়ী করছেন ।
উৎসবের ভরা মরসুমে চোখ রাঙাচ্ছে জ্বর। হুগলির শ্রীরামপুর শহর-সহ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় বাড়ছে ডেঙ্গির আশঙ্কা। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে জ্বর নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন। নার্সিংহোম-হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসকেরা আবহাওয়ার তারতম্যকেই দায়ী করছেন ।
দুর্গাপুজোর আগে থেকেই শ্রীরামপুরের রাইল্যান্ড রোড, জীতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি রোড, খাসবাগান, নন্দীমাঠ প্রভৃতি এলাকায় জ্বর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছিল। গত দু’সপ্তাহ ধরে শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড-সহ নানা জায়গায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কারও কারও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে এনএসওয়ান-এর জীবাণু মিলেছে। শ্রীরামপুরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘৪০ জন রোগী দেখলে তার মধ্যে প্রায় ৩০ জনই আসছেন জ্বর নিয়ে।’’ শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ১৭ জন জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে তিন জনের ডেঙ্গির উপসর্গ রয়েছে। তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে গড়ে ৮-১০ জন জ্বরের রোগী আসছেন আউটডোরে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জ্বরের সঙ্গে অনেকেরই গলা বা গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা থাকছে। কারও ক্ষেত্রে বমি, গা-গোলানো, পেটে ব্যথা, বার বার পাতলা মলত্যাগের মতো উপসর্গও থাকছে। বেশির ভাগই ভাইরাসঘটিত জ্বর। তিন থেকে পাঁচ দিন তা থাকছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। তাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে। কখনও চড়া রোদ উঠছে। ফলে অস্বস্তিকর গরম থাকছে। ভোরে ঠান্ডা ভাব থাকছে। এই ধরনের আবহাওয়া ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য আদর্শ। বৃষ্টিতে জমা জলে মশা ডিম পাড়ছে। এতে ডেঙ্গি-সহ পতঙ্গবাহিত অন্যান্য রোগের আশঙ্কা বাড়ছে।
কী করবেন
• দিনের বেলায় মশার কামড় এড়াতে ফুলহাতা জামা পড়ুন।
• ঘরে থাকলে মশা মারার তেল বা মলম ব্যবহার করুন। অথবা নিমপাতা পোড়ান।
• শোওয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
• বাড়িতে বা আশপাশে জল জমতে দেবেন না। ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা পরিষ্কার জমা জলেই ডিম পাড়ে।
• জ্বর হলে সরকারি হাসপাতালে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।
• সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা হয়।
সূত্র: হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘দিনে ভ্যাপসা গরমে ঢকঢক করে ফ্রিজের জল বা ঠান্ডা পানীয় গলায় ঢালছেন অনেকে। আবার ভোরে ঠান্ডা ভাব। এতেই জ্বর, গলায় ব্যথা হচ্ছে। বর্ষায় বাইরের জল খাওয়ায় পেটের সমস্যা হচ্ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ঋতু পরিবর্তনের সময়ে ১০-১২ শতাংশ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হন। যদিও শ্রীরামপুর মহকুমায় এই অনুপাত এখন ১৬ শতাংশের কাছাকাছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। জ্বরের হিসেব নেওয়া, সতর্ক করার পালা চলছে। মশার লার্ভা মারতে তেল ছড়ানো হচ্ছে।
সিএমওএইচ শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রীরামপুর মহকুমাতেই ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। জেলার অন্যত্র তা স্বাভাবিক। ডেঙ্গির উপসর্গ দেখলে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে। অধিকাংশ রিপোর্টই নেগেটিভ আসছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জ্বর হচ্ছে ভাইরাস থেকে। দিন কয়েক তা থাকছে।’’ পাশাপাশি তিনি অযথা আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
এলাকা ঘুরে জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগ্রহ করা তথ্য নিয়ে শুক্রবার পর্যালোচনা করা হয় সিএমওএইচ দফতরে। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে জমা জল পরীক্ষার জন্য বাড়িতে ঢুকতে বাধা পেতে হচ্ছে। তথাকথিত অভিজাত এলাকায় সমস্যা বেশি।
কয়েক বছর আগে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি ছেয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুও হয়েছিল কয়েকজনের। সেই সময় শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে মহামারি ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। পরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের খবর আনতে শুরু করেন। আবর্জনা, জমা জল নিয়েও রিপোর্ট দেন। যে সব পরিবার উদাসীন, তাঁদের সতর্ক করা হয়। এর ফলও মেলে হাতেনাতে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
আবার মাথাচাড়া দিয়েছে জ্বর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy