চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা। হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে উঠেছে একাধিক অভিযোগ। আর এ হেন পরিস্থিতির জন্য রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকেই চাযী করছেন হাসপাতালেক কর্মী থেকে হাসপাতালে আসা রোগীরা।
ঘটনাটি হুগলির রিষড়া সেবা সদনের। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত অক্টোবর মাস থেকে কর্মীদের বেতন বন্ধ। তার উপর রোগী ভর্তি তলানিতে ঠেকায় হাসপাতালের তহবিলের অবস্থাও ভাল নয়। বেতনের দাবিতে দিন কয়েক আগে হাসপাতাল সুপারকে ঘেরাও করেন কর্মীরা। কিন্তু কোন পথে সুরাহা মিলবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তার সদুত্তর নেই।
হাসপাতালের সুপার মনীশশকুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘গত ডিসেম্বর মাসের শেষে দায়িত্ব নিয়েছি। বেতনের বিষয়টি নিয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি জানিয়েছেন, বিধায়ক অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর নতুন সরকার আসার পর থেকেই হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। পুরসভার উপরেই এই হাসপাতাল পরিচালনার ভার। কর্মীদের আন্দোলন এবং অনেক টালবাহানার পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। কয়েক মাস আগে তৃণমূলের পুরপ্রধান অপসারিত হন। নতুন লোক পুরপ্রধানের দায়িত্ব নেন। তারপরেই ফের সমস্যার শুরু।
প্রশাসন সূত্রে খবর, খাতায় কলমে হাসপাতাল চালানোর জন্য ট্রাস্টি বোর্ড রয়েছে। বাম জমানায় তৎকালীন সিপিএম পুরপ্রধান দিলীপ সরকার ছিলেন হাসপাতালের সর্বেসর্বা এবং ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য। তখন নিয়ম ছিল, পদাধিকারবলে পুরপ্রধান কমিটির সভাপতি হবেন। হাসপাতাল চালাতে বাম সরকার অনুদান হিসেবে বছরে ২৭ লক্ষ টাকা দিত। কিন্তু নতুন সরকার আসার পরেই হাসপাতালের পট পরিবর্তন হয়। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগেই দিলীপবাবু হাসপাতালের কমিটি ভেঙে দিয়ে পরিচালন কমিটি তৈরি করেন। তার প্রধান হন নিজেই। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে দিলীপবাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অনুদান বন্ধ করে দেয়। দিলীপবাবু-সহ পরিচালন সমিতির সদস্যরা পদত্যাগ করেন। অনুদান না মেলায় বন্ধ হয়ে যায় কর্মীদের বেতন বন্ধ। অচলাবস্থা তৈরি হয় হাসপাতালে।
হাসপাতাল চালাতে রাজ্য সরকার ২০১৩ সালে তদারকি কমিটি তৈরি করে। কমিটির সভাপতি শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক। সহ-সভাপতি বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। এতদিন কর্মীদের বেতনের একাংশ মেটানো হচ্ছিল পুরসভার তহবিল থেকে। বাকি অংশ মেটানো হচ্ছিল হাসপাতালের আয় থেকে। গত নভেম্বর মাসে নতুন পুরপ্রধান হন তৃণমূলের বিজয় মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালটির সুষ্ঠু ভাবে চালাতে যে পরিমাণ টাকা দরকার পুরসভার তা নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের এমন অবস্থার ট্রাস্টির লোকই দায়ী।’’ মুখে না বললেও পুরপ্রধানের লক্ষ্য যে সিপিএম নেতা দিলীপ সরকার, তা বলাই বাহুল্য। কারণ তিনি এখনও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।
এ ব্যাপারে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালের গঠনতন্ত্রেই বলা আছে ট্রাস্টি বোর্ড হাসপাতালের সম্পত্তির মালিক। হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। বেতন মেটানো তদারকি কমিটির দায়িত্ব।’’
যদিও দু’পক্ষের চাপানউতোরে কবে থেকে কর্মীরা বেতন পাবেন তা কোনওপক্ষই জানাতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy