রিকশা নিয়ে সনৎ। ছবি: দীপঙ্কর দে
বাড়ির দোরগোড়ায় সাইকেল থেকে নেমেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল তাপসবাবুর। সঙ্গের ব্যাগটা কোথায়? যেমন তেমন ব্যাগ তো নয়। কড়কড়ে ২ লক্ষ টাকা যে রয়েছে ব্যাগে! সাইকেল দাঁড় করিয়ে যে পথ ধরে ফিরেছিলেন, সেটা তন্নতন্ন করে খুঁজেও ব্যাগের সন্ধান পাননি শ্রীরামপুরের খটিরবাজারের বাসিন্দা তাপস ভট্টাচার্য। বাধ্য হয়ে ছুটলেন রিষড়া থানায়।
থানায় গিয়ে মুখে হাসি ফুটল। পুলিশ জানায়, কোনও চিন্তা নেই। রাস্তা থেকে একটি ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে থানায় জমা দিয়ে গিয়েছেন এক রিকশাচালক। থানায় সনৎ দে নামে ওই রিকশাচালকই তাপসবাবুর হাতে ব্যাগটি তুলে দেন। ব্যাগ খুলে তাপসবাবু দেখেন, যেমন টাকা তেমনই রয়েছে। শুক্রবার রাতে এমন ঘটনারই সাক্ষী রইলেন ওই থানার পুলিশকর্মীরা।
তাপসবাবু জানান, তিনি কলকাতার মানিকতলায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। শুক্রবার বিকেলে একটি জায়গা থেকে দু’লক্ষ টাকা তুলেছিলেন তিনি। ওই টাকা অফিসে পৌঁছে ফিরতে রাত হয়ে যাবে ভেবে তিনি ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। রিষড়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। জিটি রোডের ধারের একটি দোকান থেকে দুধ কেনেন। ব্যাগটা তখনও সঙ্গে ছিল। কিন্তু ফের সাইকেল নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় বেমালুম ভুলে যান ব্যাগের কথা।
থানায় বসে হাসতে হাসতে এ বার বলতে শুরু করেন সনৎবাবু। তিনি জানান, রাস্তায় ব্যাগটা পেয়েই তাঁর মনে হয়েছিল, মূল্যবান কিছু রয়েছে। কিছু না ভেবেই ফাঁড়ির পুলিশকর্মীদের ব্যাগটি জমা দিয়ে যান। তারপর রাতে থানার ওসি প্রবীর দত্ত তাঁকে ফোন করে জানান, ব্যাগ-মালিকের সন্ধান মিলেছে। এমনকী তাঁকে থানায় আসতেও বলা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সনৎবাবুকে এলাকায় সকলে কালু রিকশাওয়ালা বলেই চেনেন। নিজের রিকশা নেই। ভাড়া নিয়ে চালাতে হয়। টোটোর দাপটে রোজগার এখন তলানিতে। দুই ছেলেমেয়ে। ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেড়েছে। মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সামান্য আয়েই চলে সংসার। দিন-রাতের অনেকটা সময় কাটে ফাঁড়িতে। রাতেও ফাঁড়ির ব্যারাকে শুয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘খেটে রোজগার করি। ব্যাগটা পেয়ে অন্য কোনও চিন্তা মাথায় আসেনি। আবার যদি এমন হয়, আবারও একইভাবে ফেরত দেব।’’
শনিবার সকালেই অফিসে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে এসেছেন তাপসবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘টাকাটা না পেলে চাকরি নিয়েই টানাটানি হতো। সনৎবাবুর জন্য অতগুলো টাকা ফিরে পেলাম। ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, ‘‘ওই রিকশাচালক সততার নজির তৈরি করলেন। ওঁকে পুরস্কৃত করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’ রিষড়ার পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্রও বলেন, ‘‘সনৎ সৎ। পুরসভার তরফেও ওঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।’’
এ সবে অবশ্য মাথাব্যথা নেই সনৎবাবুর। শনিবার সকাল থেকেই ফের রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন তিনি। পেটের তাগিদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy