রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়
অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাস দেড়েক আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন হাওড়ার শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ার রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়। তাঁকে যে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে এবং দেহটি সন্দেশখালিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে, সোমবার সেই তথ্য সামনে এল পুলিশের। তাঁর দূর সম্পর্কের শ্যালক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করার পরে।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধের কথা কবুল করেছে। ঘটনার মূল চক্রী শুভেন্দু দে ওরফে পার্থ নামে রজতবাবুর ওই শ্যালক জেরায় জানিয়েছে, রজতবাবুর বড় মেয়ে রনিতাকে সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। রজতবাবু তা না মানায়, তাঁকে সে খুনের চক্রান্ত করে। আজ, বুধবার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সন্দেশখালির একটি মেছোভেড়ির পাশ থেকে ওই মৃতদেহ তোলারকথা পুলিশের।
গত ২৩ মে অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন শিবপুরের প্রসন্নকুমার দত্ত লেনের বাসিন্দা রজতশুভ্রবাবু। তিনি মুম্বইয়ের একটি বহুজাতিক সংস্থার কলকাতা অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন। তদন্তে নেমে সোমবার রাতে রজতশুভ্রবাবুর দূর সম্পর্কের শ্যালক হাওড়ারই বাসিন্দা পার্থ এবং তার কারখানার ম্যানেজার গৌতম সাহুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জেরা করে পার্থর গাড়ির চালক সন্তু সর্দার এবং সন্দেশখালির বাসিন্দা, গৌতমের দুই আত্মীয় রণজিৎ মাইতি ও বাবলু জানাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের প্রত্যেককে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শুভেন্দু দে ওরফে পার্থকে হাওড়া আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মেয়ে রণিতা।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রজতবাবু নিখোঁজ হওয়ার পিছনে পার্থ জড়িত থাকতে পারে বলে মুখোপাধ্যায় পরিবার থেকে একাধিক বার অভিযোগ করা হয়েছিল। অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ওই যুবকের গতিবিধির ওপরও নজর রাখছিল পুলিশ। তার মোবাইলের কললিস্টও পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রজতবাবুর বাড়িতে দু’ লক্ষ টাকা চেয়ে দু’বার ফোন ও হুমকি দিয়ে এসএমএস আসে। আর এখানেই ভুল করে চক্রান্তকারীরা। তদন্তকারীরা জানান, ওই ফোন নম্বর থেকে জানা যায় গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে পার্থ। এর পরেই একে একে পুরো দলটাকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে নেমে এবং ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, গত ২৩ মে রজতবাবু যখন অফিস যাওয়ার জন্য রওনা হন, তখন পূর্ব পরিকল্পনা মতো পার্থ এবং গৌতম একটি সাদা গাড়ি নিয়ে ফজির বাজারের কাছে জি টি রোডে অপেক্ষা করছিল। চালকের আসনে ছিল সন্তু। ‘লিফট’ দেবে বলে রজতবাবুকে পার্থ গাড়িতে তুলে নেয়। এর পর মাঝপথে কোনও এক জায়গায় খুন করে। এক সময় পার্থও গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি ফিরে যায়। গৌতম সন্দেশখালিতে তার মামা রণজিৎ মাইতি এবং বাবলু জানাকে ফোন করে গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দেয় এবং সেখানে পৌঁছে তাদের সাহায্যে মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে দেয়। ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে রঞ্জিত এবং বাবলু দেহটি পোঁতে। মৃতদেহটি এখনও সেখানেই রয়েছে। দেহের নীচে রজতশুভ্রবাবুর জামাকাপড়, ঘড়ি এবং মানিব্যাগ রাখা হয়েছে।
শিবপুরে পৈতৃক বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন রজতবাবু। স্ত্রী পিয়ালিদেবী গৃহবধূ। দুই মেয়ের মধ্যে বড় রণিতা বাণিজ্য বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে পারমিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন রজতবাবু। রজতবাবুর পরিবার সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে পার্থর সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। পার্থ রণিতাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। আর এ থেকেই ওই যুবকের সঙ্গে পরিবারের তিক্ততা শুরু হয় বলে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে।
পুলিশ জানায়, তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে ওই যুবককে বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করে দেন রজতবাবু। তাঁর সঙ্গে তুমুল বচসাও হয় পার্থর। ওই সময় পার্থ রজতবাবুকে হুমকিও দেয় বলে বলে অভিযোগ। রজতবাবু আচমকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দিন পার্থ রাত ১টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে হাজির হয় এবং রণিতাকে মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে রজতবাবুকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। ওই পরিবারের পক্ষ থেকে জানান হয়, ওই দিনের পর পার্থকে অবশ্য আর সেখানে দেখা যায়নি। এমনকী, ফোন করে সে খোঁজও নেয়নি।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy