প্রতীকী ছবি।
দিন কয়েক আগে সন্ধ্যায় টিউশন নিতে যাওয়ার সময় পরিচিত এক যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই সে মনমরা হয়ে ছিল। শনিবার হুগলির পোলবার বাসিন্দা বছর ষোলোর ওই কিশোরী ধর্ষণের জেরে লজ্জায় গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করে বলে বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন। সঙ্কটজনক অবস্থায় কিশোরীকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগুনে মেয়েটির মাথা, বুক, হাত-পা পুড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে শরীরের ৭৫%-৮০% পুড়ে গিয়েছে। মেয়ের ওই অবস্থায় মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকেও ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরীর বাবা মারা গিয়েছেন। সে মা ও সৎবাবার সঙ্গে থাকে। সৎবাবা ট্রেনের হকার। শনিবার সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। সকাল ৭টা নাগাদ মেয়েটির মা-ও ঘরে ছিলেন না। মেয়েটি নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাঁর চিৎকারে মা এবং প্রতিবেশীরা এসে দেখেন, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে মেয়েটির শরীরে।
মেয়েটির সৎবাবা বলেন, ‘‘অত্যাচারিত হওয়ার পর থেকেই মেয়ে মনমরা হয়ে থাকত। খেতে চাইত না। কিন্তু এমন করবে, ভাবিনি।’’ তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা জানান, শারীরিক অবস্থা জটিল থাকায় এ দিন মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। একটু সুস্থ হলেই কথা বলার চেষ্টা করা হবে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই কিশোরী হেঁটে টিউশন পড়তে যাচ্ছিল। অভিযোগ, তখন সুমন সাঁতরা নামে বছর সাতাশের এক যুবক তাকে আমবাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটি পরের দিন বাড়িতে ঘটনার কথা জানায়। বুধবার তার মা পোলবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় (৩৭৬ এবং পকসো আইনের ৪ নম্বর ধারা) মামলা রুজু করে পুলিশ। মেডিক্যাল পরীক্ষায় অত্যাচারের প্রমাণ মেলে। অভিযুক্ত সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অভিযুক্তের বাবা বরুণ সাঁতরা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। মেয়েটির আত্মীয়দের অভিযোগ, মঙ্গলবার বরুণ এবং পোলবা-দাদপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা প্রশান্ত গোল তাঁদের বাড়িতে এসে বিষয়টি মিটমাট করে নিতে বলে কার্যত সালিশি সভা বসান। নির্যাতিতার আত্মীয়েরা সমঝোতায় রাজি হননি।
বরুণ এবং প্রশান্তের দাবি, তাঁরা সালিশি সভা বসাননি। মেয়েটির মা ডাকায় আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধি হয়েও ধর্ষণের অভিযোগ পুলিশকে না জানিয়ে আলোচনায় যাওয়া নিয়ে প্রশান্তের সাফাই, গ্রাম্য বিষয় বলেই গিয়েছিলেন। বরুণের বক্তব্য, পুলিশ তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিক।
হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকদের বক্তব্য, ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত যথাযথ ভাবেই করা হচ্ছে। তবে, সালিশির কোনও অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ হলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধৃত সুমনকে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হলে দু’দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। শনিবার ফের তাকে আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পোলবা-কাণ্ড নিয়ে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিজেপি। দলের যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদিকা পামেলা গোস্বামী, সংগঠনের হুগলির নেতা সুরেশ সাউ এ দিন হাসপাতালে এবং থানায় যান। পামেলা বলেন, ‘‘মেয়েটা আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা নিজে করেছে নাকি করানো হয়েছে, এটা প্রশ্ন। বাংলায় মেয়েদের সুরক্ষা এই ঘটনাতেই প্রমাণিত।’’ সুরেশ বলেন, ‘‘ঘটনাটি চাপা দিতে তৃণমূল কম চেষ্টা করেনি। সালিশি করতে গিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? প্রশান্ত গোলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
তথ্য সহায়তা: প্রকাশ পাল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy